সৌদি আরবে তেলের সাম্রাজ্য, এবার ঝুঁকছে বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব, এবার পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) দিকে ঝুঁকছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার এই খাতে বিশাল বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
যদিও বর্তমানে সেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার খুবই কম, কিন্তু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখলে মনে হয়, খুব দ্রুতই দৃশ্যপট বদলাতে চলেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, সৌদি আরবে মোট গাড়ির বিক্রি’র মাত্র ১ শতাংশের কিছু বেশি হলো ইভি। যেখানে বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, এই হার অনেক বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৮ শতাংশ গাড়ি ছিল বিদ্যুচ্চালিত।
সৌদি আরবে ইভি’র প্রসারে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গাড়ির উচ্চ মূল্য। দেশটির বাজারে বিদ্যমান অনেক ইভি’র দাম বেশ চড়া।
তাছাড়া, চার্জিং স্টেশন এর অপ্রতুলতাও একটি বড় সমস্যা। পেট্রোলের দামও সেখানে বেশ কম, ফলে মানুষ সহজে গ্যাসোলিন চালিত গাড়ি কিনতে আগ্রহী হয়।
কিন্তু সরকার চাইছে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী রিয়াদে ৩০ শতাংশ গাড়ি যেন বিদ্যুচ্চালিত হয়।
এই লক্ষ্য পূরণে সৌদি সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ইভি চার্জিং অবকাঠামো তৈরি করতে একটি বিশেষ কোম্পানি, ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি’ (EVIQ) প্রতিষ্ঠা করেছে।
২০২৩ সালের শেষ নাগাদ, দেশটিতে প্রায় ২৮৫টি পাবলিক চার্জিং পয়েন্ট ছিল, যার বেশিরভাগই ছিল ধীর গতির চার্জার। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, রাজধানী রিয়াদে EVIQ তাদের প্রথম দ্রুত চার্জিং স্টেশন চালু করেছে।
২০৩০ সাল নাগাদ তারা ১০০০টি স্থানে ৫০০০টি দ্রুত চার্জিং স্টেশন তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।
EVIQ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গাজ্জাজ জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত চার্জিং অবকাঠামো না থাকলে অনেকে ইভি কিনতে দ্বিধা বোধ করেন।
তাই তারা এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
শুধু চার্জিং স্টেশন তৈরি করাই নয়, সৌদি আরব চাইছে এই খাতে একটি “পূর্ণাঙ্গ শিল্প বাস্তুতন্ত্র” গড়ে তুলতে। তারা ইভি তৈরির হাব হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
দেশটির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (PIF) এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। PIF, যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি প্রস্তুতকারক লুসিড-এর বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার। লুসিড এরই মধ্যে সৌদি আরবে তাদের প্রথম গাড়ি তৈরির কারখানা খুলেছে।
এছাড়াও, PIF এবং তাইওয়ানের কোম্পানি Foxconn-এর যৌথ উদ্যোগে CEER নামে একটি কোম্পানি কাজ করছে, যারা ২০২৬ সালের মধ্যে সৌদি আরবে তৈরি প্রথম ইভি বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। Hyundai-এর সঙ্গে PIF-এর আরেকটি যৌথ উদ্যোগেও একটি কারখানা তৈরি হচ্ছে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ইভি প্রস্তুতকারক কোম্পানি সৌদি আরবে তাদের ব্যবসা শুরু করেছে। চীনের BYD তাদের প্রথম শোরুম খুলেছে এবং এপ্রিল মাসেই টেসলাও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
BYD-এর একটি মডেল, Atto 3, প্রায় ২৭,০০০ ডলারে (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা) বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একদিকে যেমন তারা তেলের উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে, তেমনই কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশ সুরক্ষায়ও ভূমিকা রাখতে চাইছে।
তবে এই পরিবর্তনের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। গাড়ির উচ্চ মূল্য, চার্জিং স্টেশনের অভাব এবং বিদ্যুতের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে, সৌদি আরবের এই ইভি বিপ্লব সফল হতে পারে।
ভবিষ্যতে, সৌদি আরবের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে। আমাদের দেশেও বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: CNN
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			