ইরানে সৌদি মন্ত্রীর ঐতিহাসিক সফর! উত্তেজনা বাড়ছে?

সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান আল সৌদ-এর তেহরান সফর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কয়েক দশক পর এই প্রথম কোনো শীর্ষ পর্যায়ের সৌদি প্রতিনিধি ইরানের রাজধানী সফর করলেন।

বৃহস্পতিবারের এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বৃদ্ধি, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা জোরদার করা এবং সন্ত্রাস দমনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রিন্স খালিদ-এর সঙ্গে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরির বৈঠক হয়েছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ-এর খবর অনুযায়ী, দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

এর আগে, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির শাসনামলে সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ ইরান সফর করেছিলেন। প্রিন্স খালিদ সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পুত্র।

এই সফর এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন তেহরান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে।

ইরান সতর্ক করে বলেছে, তাদের ভূখণ্ডে কোনো ধরনের হামলা হলে তা বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের সূচনা করতে পারে।

২০১৬ সালে সৌদি আরবের শিয়া নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায়। এর জেরে রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

এরপর কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ, বিশেষ করে ইয়েমেনে এই যুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণ করে।

ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। দুই দেশই তখন একে অপরের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পরেছিল।

তবে দুই বছর আগে, চীন-এর মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর দুই দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

সৌদি আরবসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বিরোধে সরাসরি জড়ানো এড়িয়ে চলতে চাইছে। গত বছর, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।

তাদের আশঙ্কা ছিল, ইরানের তেল স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ইরান তখন হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, ইসরায়েলকে সহায়তা করলে তাদেরও আক্রমণকারী হিসেবে গণ্য করা হবে।

গত অক্টোবরে, সৌদি আরব ও ইরান প্রথমবারের মতো ওমান উপসাগরে যৌথ নৌ মহড়া চালায়। নভেম্বরে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ ফায়াদ আল-রুয়াইলি তেহরান সফর করেন এবং তাঁর ইরানি সমকক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *