ছেলেবেলার পাঠশালা থেকে আমরা কত কিছুই না শিখি! কিন্তু জীবনের পথ চলতে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়, যা হয়তো আমাদের বিদ্যালয়ে শেখানো হয়নি, সেগুলোর গুরুত্ব অনেক।
সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, অভিভাবকদের ৯৪ শতাংশই মনে করেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সমস্যা সমাধান এবং যোগাযোগের মতো জীবন-ঘনিষ্ঠ দক্ষতাগুলো শিক্ষাক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।
আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে, তেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা বিদ্যালয়ে শেখানো হলে তরুণ প্রজন্মের জীবন আরও সহজ হতে পারে।
১. ক্রেডিট বা ঋণ সম্পর্কে ধারণা:
ঋণ বা ক্রেডিট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকাটা জরুরি।
বিশেষ করে, বর্তমান যুগে যখন ব্যাংক ঋণ এবং বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল লোনের (loan) চাহিদা বাড়ছে, তখন এর ভালো-মন্দ দুটো দিক সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন।
একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর তৈরি করা ভবিষ্যতে ভালো সুদে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
তাই, কীভাবে সময় মতো বিল পরিশোধ করতে হয় এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সঠিক নিয়মগুলো জানা দরকার।
২. সময় ব্যবস্থাপনা:
সময়ানুবর্তিতা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।
সময়মতো কাজ শেষ করার অভ্যাস তৈরি করতে বিদ্যালয়ে সময় ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
কিভাবে একটি সময়সূচি তৈরি করতে হয়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ সাজানো যায় এবং বড় কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে ধারণা দিতে পারলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
৩. আত্মরক্ষা:
বর্তমান সমাজে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
আত্মরক্ষার কৌশল জানা থাকলে বিপদের সময় নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে আত্মরক্ষামূলক কৌশল শেখানো যেতে পারে।
এছাড়া, রাস্তায় চলাচলের সময় নিজের চারপাশ সম্পর্কে সচেতন থাকার গুরুত্বও বোঝানো উচিত।
৪. জরুরি মেরামত বা DIY (Do It Yourself):
ছোটখাটো মেরামতের কাজগুলো জানা থাকলে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সাহায্য করতে পারে।
যেমন, বিদ্যুতের সাধারণ সমস্যাগুলো ঠিক করা, পানির কল মেরামত করা কিংবা দেয়ালে পেরেক ঠোকার মতো কাজগুলো শেখা যেতে পারে।
৫. বাজেট তৈরি করা:
অর্থের সঠিক ব্যবহার এবং একটি বাজেট তৈরি করা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
শিক্ষার্থীদের ‘প্রয়োজন’ ও ‘ইচ্ছা’র মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শেখানো উচিত।
তাদের ছোট ছোট খরচের হিসাব রাখতে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
এই অভ্যাস ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করবে।
৬. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা:
জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে।
কিন্তু ব্যর্থতাকে কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়, তা জানাটা জরুরি।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যর্থতা নিয়ে ভীতি দূর করতে এবং নতুন কিছু করার উৎসাহ যোগাতে চেষ্টা করা উচিত।
প্রত্যেকটি অভিজ্ঞতাকে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে দেখার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
৭. আইডিয়া উপস্থাপন:
নিজের আইডিয়া বা ধারণা অন্যদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার দক্ষতা থাকাটা খুব দরকারি।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দলগতভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে, যেখানে তারা তাদের আইডিয়াগুলো উপস্থাপন করবে এবং অন্যদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করতে শিখবে।
৮. প্রাথমিক চিকিৎসা:
যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান থাকাটা খুব জরুরি।
বিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে, যা জরুরি অবস্থায় জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে।
কিভাবে আহত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে হয়, তা জানা থাকলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব।
৯. দর কষাকষি বা নেগোসিয়েশন:
আলোচনার মাধ্যমে কোনো বিষয়ে সমাধানে আসার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দর কষাকষি করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, যেমন – কোনো আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা বা খেলাধুলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়ম তৈরি করা।
১০. প্রতারণা শনাক্তকরণ:
বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতারণার (scam) সংখ্যা বাড়ছে।
অনলাইনে কেনাকাটা থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া পর্যন্ত, বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সন্দেহজনক বার্তা বা অফারগুলো যাচাই করার বিষয়ে শেখানো যেতে পারে।
জীবনকে সহজ ও সুন্দর করতে বিদ্যালয়ে জীবন-ঘনিষ্ঠ এই দক্ষতাগুলো শেখানো অত্যন্ত জরুরি।
অভিভাবকদেরও উচিত সন্তানদের এই বিষয়গুলো শেখাতে সহায়তা করা।
তথ্য সূত্র: The Guardian