বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ: যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে বাড়ছে কড়াকড়ি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রবণতা বাড়ছে। দেশটির অর্ধেকের বেশি রাজ্যে এখন এ সংক্রান্ত আইন বা বিধিমালা তৈরি হয়েছে। মূলত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য, পড়াশোনার মান এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ফ্লোরিডা রাজ্যে ২০২৩ সালে প্রথম এমন আইন পাস হয়। এরপর দ্রুতগতিতে অন্যান্য রাজ্যও একই পথে হাঁটছে। নিউ ইয়র্ক এবং ওক্লাহোমার মতো বিভিন্ন রাজ্যেও এই বছর বিল পাস হয়েছে, যা প্রমাণ করে ফোন যে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর, এই বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে।
কানেকটিকাট রাজ্যের আইনপ্রণেতা জেনিফার লিপার গত ১৩ই মে ফোনকে শিশুদের জন্য “ক্যান্সার” হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা একাকীত্ব বাড়াচ্ছে, মনোযোগ কমিয়ে দিচ্ছে এবং সামাজিক-আবেগিক সুস্থতার পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থাতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এটি কেবল একটি শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয় নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্য এবং জনসাধারণের নিরাপত্তার সাথেও জড়িত।
এ পর্যন্ত ২৬টি রাজ্যে এ সংক্রান্ত আইন পাস হয়েছে। এছাড়া, আরও আটটি রাজ্য ও ডিসট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া স্থানীয় স্কুলগুলোতে বিধিমালা তৈরি বা সুপারিশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুধু মঙ্গলবারেই নেব্রাস্কা রাজ্যের গভর্নর জিম পিলন স্কুল চলাকালীন সময়ে ফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এর আগে, আলাস্কার আইনপ্রণেতারাও স্কুলগুলোকে ফোন নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন।
ফ্লোরিডা, মিসৌরি, নেব্রাস্কা এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারেও খুব শীঘ্রই এ সংক্রান্ত বিল আইনে পরিণত হতে পারে।
ফ্লোরিডায় প্রথমে শুধু ক্লাসের সময় ফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, তবে এখন সেখানে পুরো স্কুল চলাকালীন সময়েই এই নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য বিল বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমানে ১০টি রাজ্যে স্কুল চলাকালীন সময়ে ফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যা ক্লাস-১২ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য।
উত্তর ডাকোটার গভর্নর, রিপাবলিকান কেলি আর্মস্ট্রং, স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে “বিজয়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল বোর্ড সবাই এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন। আর্মস্ট্রং সম্প্রতি একটি স্কুলে গিয়েছিলেন, যেখানে এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। তিনি দেখেছেন, শিক্ষার্থীরা খাবার টেবিলে বসে একে অপরের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের বাইরের সমস্যাগুলো কমাতে সহায়ক। যেমন – ছাত্রছাত্রীদের মারামারি বা ঝামেলার ভিডিও ধারণ করা বা অনলাইনে আপলোড করার প্রবণতা বন্ধ করা যায়।
তবে কিছু রাজ্যে, বিশেষ করে যেখানে স্থানীয় স্কুলগুলোর স্বায়ত্তশাসনের ঐতিহ্য রয়েছে, সেখানে স্কুলগুলোকে নিজস্ব নীতি তৈরি করতে বলা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, মেইন রাজ্যে প্রথমে স্কুল চলাকালীন ফোন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হলেও, এখন সেখানে একটি নীতি তৈরির প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে।
কিছু রাজ্যে অবশ্য আইন প্রণয়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, জানুয়ারিতে ওয়াইওমিংয়ে সিনেটররা একটি বিল বাতিল করে দেন। তাদের মতে, এই বিষয়ে শিক্ষক বা অভিভাবকদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
নিয়ম তৈরি করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্যতিক্রমের সুযোগ রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ রাজ্যই অসুস্থতাজনিত কারণে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এবং জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে। কিছু রাজ্যে, ইংরেজি যাদের প্রথম ভাষা নয়, তাদের জন্য অনুবাদক যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
তবে অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে তাদের সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। তারা চান, কোনো সংকটকালে যেন তারা তাদের সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
অনেক শিক্ষার্থীও এই বিধিনিষেধের বিরোধিতা করছে। তারা মনে করে, ফোন ব্যবহারের পরিবর্তে স্কুলে কিভাবে এর সঠিক ব্যবহার করা যায়, সেই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত।
বেশিরভাগ রাজ্যই এই আইন কার্যকর করার জন্য আলাদাভাবে কোনো তহবিল বরাদ্দ করেনি। কিছু রাজ্য অবশ্য স্কুলগুলোকে ফোন রাখার জন্য লকার বা অন্য কোনো ব্যবস্থা কেনার জন্য সামান্য কিছু অর্থ দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্ক সরকার এই খাতে ১৩.৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪১ কোটি টাকা) খরচ করার পরিকল্পনা করেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস