স্কুল শুটার: ভয়ঙ্কর ফ্যাসিনেশন, বাড়ছে উদ্বেগের কারণ!

স্কুলগুলোতে বন্দুকধারীর হামলা: অতীতের ঘাতকদের প্রতি আকর্ষণ কেন?

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি চার্চে হামলার ঘটনায় আবারও নাড়া দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। মিনিয়াপলিসের সেই ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হামলাকারী, যিনি একজন তরুণী ছিলেন, তাঁর ডায়েরিতে অন্যান্য বন্দুকধারীদের প্রতি গভীর অনুরাগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এমনকি, হামলার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোতেও চিহ্নিত করা ছিল অতীতের কুখ্যাত ঘাতকদের নাম। প্রশ্ন হলো, কেন এই ধরনের হামলাকারীরা তাঁদের পূর্বসূরীদের প্রতি আকৃষ্ট হন?

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পেছনে কাজ করে এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ। এই ধরনের হামলাকারীরা সমাজে নিজেদের একঘরে ও গুরুত্বহীন মনে করেন। তাঁরা চান পরিচিতি, সম্মান এবং নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে।

অতীতে নৃশংস ঘটনাগুলোর সঙ্গে নিজেদের মিল খুঁজে পান তাঁরা। অন্যদের মতো, তাঁরাও অনুভব করতে চান যে তাঁরাও সমাজের অংশ এবং তাঁদেরও একটা পরিচয় আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ‘অনুপ্রেরণা’র কারণ হলো – খ্যাতি লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। তাঁরা চান, তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা হোক, তাঁদের ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হোক। তাঁরা চান, তাঁদের নৃশংসতা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করুক।

এই মানসিকতা তাঁদের মধ্যে এক ধরনের ‘আমিই পারি’ ভাব তৈরি করে, যা তাঁদের সহিংস পথে ঠেলে দেয়।

উদাহরণস্বরূপ, কলাম্বাইন হাই স্কুল হামলার ঘটনাটি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতকদের প্রতি অনেক তরুণ-তরুণীর মধ্যে এক ধরনের মুগ্ধতা দেখা যায়।

অনলাইনে ‘কলাম্বাইনর’ নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠী তাঁদের ‘হিরো’ হিসেবে উপস্থাপন করে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এমনকি, অনেক হামলাকারী তাঁদের পূর্বসূরীদের লেখালেখি অনুসরণ করে এবং নিজেদের কাজে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের প্রবণতা প্রতিরোধের জন্য পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সন্তানদের অনলাইন কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করা, সন্দেহজনক আচরণ দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং গণমাধ্যমে ঘাতকদের মহিমান্বিত না করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, অনেক সময় এই ধরনের হামলাকারীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। বন্ধু, সহপাঠী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তাই, সমাজের প্রত্যেক সদস্যের সচেতনতা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের গবেষণা থেকে জানা যায়, অতীতে ঘটা নৃশংস ঘটনার প্রতি এই ধরনের অস্বাভাবিক আকর্ষণ একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কোনো শিশুর মধ্যে এমন প্রবণতা দেখা গেলে, তা অবশ্যই অভিভাবকদের নজরে আনা উচিত।

আমাদের মনে রাখতে হবে, সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিকতার মানুষজন কখনোই এ ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করে না।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *