মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুক হামলার ঘটনার শিকার হয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী মলি ক্যান্টি। তবে এই ঘটনাটিই তার জীবনে প্রথম আঘাত নয়।
এর আগে, শৈশবে ২০১২ সালের ‘স্যান্ডি হুক’ স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে পার্কল্যান্ড স্কুলে ঘটে যাওয়া বন্দুক হামলার শিকার হওয়া এক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও ছিলো তার যোগসূত্র।
এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলো ক্যান্টির মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে, যা তাকে এক তীব্র মানসিক যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে (এফএসইউ) বন্দুক হামলার সময় ক্যান্টি একটি ক্লাসরুমে ছিলেন। গুলির শব্দ ক্রমশ কাছে আসতেই তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
প্রাণে বাঁচতে তিনি এবং তার সহপাঠীরা দ্রুত আশ্রয় খুঁজে নেন। ক্যান্টি পরবর্তীতে সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “চারপাশে সবাই ছোটাছুটি শুরু করে। কোথায় যাবো, বুঝতে পারছিলাম না।”
স্যান্ডি হুক ঘটনার সময় ক্যান্টির বয়স ছিল মাত্র আট বছর। সে সময় তিনি তার স্কুলের এক শিক্ষিকাকে কাঁদতে দেখেন। এর কয়েক দিন পরই তিনি জানতে পারেন, স্যান্ডি হুকের ঘটনায় তার শিক্ষিকার বন্ধু নিহত হয়েছেন।
সেই ঘটনার স্মৃতি আজও তাকে তাড়া করে ফেরে। ঘটনার পর স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও, ক্যান্টির মনে গভীর ভীতির জন্ম হয়েছিল। তিনি প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখতেন এবং স্কুলে যেতে ভয় পেতেন।
পার্কল্যান্ড স্কুলে হামলার ঘটনাটি ক্যান্টির জীবনে আরও একটি গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি যে নাচের স্কুলে যেতেন, সেখানকার এক শিক্ষার্থী এই হামলায় নিহত হয়।
ক্যান্টি জানান, পার্কল্যান্ডের ঘটনার পর তিনি জানতে পারেন, হামলাকারী কিভাবে ফায়ার অ্যালার্ম বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের হলরুমে জড়ো করেছিল। এরপর থেকে তিনি সব সময় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন।
এফএসইউ-এর বন্দুক হামলার পর ক্যান্টির মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তিনি জানান, ঘটনার পর কয়েক দিন পর্যন্ত তিনি ভালোভাবে ঘুমাতে পারেননি।
পায়ে ব্যথার কারণে হাঁটতে সমস্যা হতো। বর্তমানে তিনি একজন মনোবিদের পরামর্শ নিচ্ছেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্দুক হামলার মতো ঘটনা শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। ক্যান্টির মতো যারা বন্দুক হামলার শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং ভয়ের সৃষ্টি হয়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গেইল সল্টজ-এর মতে, “এ ধরনের ঘটনা শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করতে পারে।”
ক্যান্টির এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অনেকের কাছেই দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি তার ভয়কে জয় করতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বদ্ধপরিকর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন