যুক্তরাষ্ট্রে (US) বিদ্যালয় ভাউচার নিয়ে বিতর্ক: অভিভাবকদের জন্য সরকারি অর্থায়নে বেসরকারি শিক্ষা?
যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে রিপাবলিকান পার্টি-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে (states) বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক চলছে – সরকারি অর্থ ব্যবহার করে অভিভাবকদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে (private schools) সন্তানদের পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হবে কিনা। এই ধরনের পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো, অভিভাবকদের শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা দেওয়া এবং তাদের পছন্দসই বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠানোর সুযোগ তৈরি করা।
তবে, এই পদক্ষেপের খরচ এবং এর ফলস্বরূপ সরকারি বিদ্যালয়ের (public schools) উপর এর প্রভাব নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন রাজ্যে এই ধরনের ভাউচার প্রোগ্রামের বিস্তার ঘটছে। টেক্সাস রাজ্যে (Texas) সম্প্রতি একটি বিল পাস হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর ১০,০০০ ডলারের বেশি বরাদ্দ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রোগ্রামের সম্ভাব্য খরচ ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষে ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা) হতে পারে, যা রাজ্যের সাধারণ তহবিলের ১ শতাংশের সামান্য বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এই খরচ বেড়ে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে (প্রায় ৪৯,৫০০ কোটি টাকা) দাঁড়াতে পারে।
ফ্লোরিডা রাজ্যে (Florida) ভাউচার প্রোগ্রাম বাবদ প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪২,৯০০ কোটি টাকা) খরচ হতে পারে, যা রাজ্যের সাধারণ রাজস্ব তহবিলের ১৩ ভাগের ১ ভাগ। এছাড়া, অ্যারিজোনা রাজ্যে (Arizona) এই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ সাধারণ বাজেটের প্রায় ৫ শতাংশ।
আইনসভাগুলোতে এই ধরনের প্রস্তাবের সমর্থনে প্রচারণা চালানোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হচ্ছে।
তবে, অনেক সমালোচক মনে করেন, এই ভাউচার প্রোগ্রামগুলি সরকারি বিদ্যালয়গুলোর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, এর ফলে সরকারি বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
এমনকি কিছু রাজ্যে, যেমন ওহাইওতে (Ohio), প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জুলাই মাস থেকে সরকারি বিদ্যালয়ের চেয়ে ভাউচার প্রোগ্রামের জন্য বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হতে পারে।
এই বিতর্কের সঙ্গে জড়িত আছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যেমন, টেনেসির (Tennessee) গভর্নর বিল লি (Bill Lee) বলেছেন যে, তার রাজ্যের ৪৪ কোটি ৭০ লক্ষ ডলারের (প্রায় ৪,৯০০ কোটি টাকা) প্রোগ্রামটি আসন্ন শিক্ষাবর্ষে চালু করা হবে।
নর্থ ক্যারোলিনার (North Carolina) গভর্নর জশ স্টেইন (Josh Stein) এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামগুলো সীমিত করার প্রস্তাব করেছেন, কিন্তু রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত আইনসভাগুলোতে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রোগ্রাম চালু করার ফলে একদিকে যেমন অভিভাবকদের পছন্দসই বিদ্যালয় বেছে নেওয়ার সুযোগ বাড়ে, তেমনি এর আর্থিক প্রভাব এবং সরকারি বিদ্যালয়ের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গভীর আলোচনা প্রয়োজন।
বিদ্যালয় ভাউচারের ধারণাটি এখনো বাংলাদেশে সরাসরি পরিচিত না হলেও, শিক্ষাখাতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা এখানেও প্রাসঙ্গিক। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাখাতে অর্থ বরাদ্দের এই ধরনের বিতর্ক বাংলাদেশের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে সহায়তা করতে পারে।
তথ্য সূত্র: