ভিমরুলের প্রতি আমাদের ধারণা বদলাতে চান এক বিজ্ঞানী। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (UCL) অধ্যাপক সেইরিয়ান সামনার-এর মতে, কীটপতঙ্গ জগৎে ভীমরুলের অবদান অনেক।
সম্প্রতি লন্ডনের UCL গ্র্যান্ট মিউজিয়াম অফ জুয়োলজিতে ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়াস্পস’ নামে একটি প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যেখানে ভীমরুলদের সম্পর্কে অজানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অধ্যাপক সামনার মনে করেন, ভীমরুলদের ভালোবাসার পাঁচটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, ভীমরুল প্রকৃতির কীট নিয়ন্ত্রক। এরা বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড়, যেমন – শুঁয়োপোকা, মাকড়সা, এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ভীমরুল না থাকলে, আমাদের এইসব পোকাদের মারতে আরও বেশি রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
দ্বিতীয়ত, ভীমরুল পরাগায়ণে সাহায্য করে। মৌমাছির মতো, এরাও ফুলের মধু আহরণ করতে যায় এবং ফুলের পরাগ বহন করে।
যদিও তারা শিকার করে, সেই শিকার তাদের বাচ্চাদের জন্য, নিজেদের জন্য নয়।
তৃতীয়ত, ভীমরুলের বিষে ক্যান্সার প্রতিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রাজিলের একটি ভীমরুল ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে পারে, কিন্তু সুস্থ কোষের কোনো ক্ষতি করে না।
তাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকও থাকে, যা তারা শিকারকে রোগমুক্ত রাখতে ব্যবহার করে।
চতুর্থত, বিশ্বের অনেক দেশে ভীমরুল খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে এশিয়ার মানুষজন এদের লার্ভা সেদ্ধ করে বা শুকিয়ে খায়।
এতে প্রচুর প্রোটিন থাকে এবং ফ্যাট কম থাকে।
পঞ্চম কারণটি হলো, ভীমরুলরা অত্যন্ত দক্ষ কাগজ তৈরি করতে পারে। গাছের বাকল বা কাঠের গুঁড়ো মুখের লালার সঙ্গে মিশিয়ে তারা চমৎকার পাতলা কাগজ তৈরি করে।
এই কাগজ ব্যবহার করে তারা বিশাল আকারের বাসা তৈরি করে, যা দেখতে অনেকটা ফুটবলের মতো।
এই বাসাতে তিন ধরনের কাগজ থাকে, যা তাদের বাসাকে শক্তিশালী করে।
অধ্যাপক সামনার ভীমরুলের সমাজকে “মীরক্যাট” (Meerkat) পরিবারের সাথে তুলনা করেছেন। মীরক্যাটদের মতো, ভীমরুলের মধ্যেও দলবদ্ধভাবে কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়।
কেউ রাণী হয়, কেউ শ্রমিক, আবার কেউ পরিস্থিতির কারণে ভূমিকা পরিবর্তন করে।
তাদের এই আচরণ সমাজবদ্ধ জীবন এবং পরোপকারিতার বিবর্তন বুঝতে সাহায্য করে।
লন্ডনের UCL গ্র্যান্ট মিউজিয়ামে এই প্রদর্শনী ২০২৪ সালের ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন