শিরোনাম: ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিস্তার, বিদ্যুতের মাধ্যমে জলাশয়ে আগ্রাসী প্রজাতি ধরছেন বিজ্ঞানীরা।
ফ্লোরিডার লেকের পানিতে এক ভিন্ন ধরনের অভিযান চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের লক্ষ্য হলো, এশীয় জলাভূমির র্যাঁচ (Asian swamp eel) নামের একটি আগ্রাসী প্রজাতির মাছ ধরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের ফলে এই মাছগুলো দ্রুত নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার বিজ্ঞানীরা লেকের পানিতে বিশেষ ধরণের একটি নৌকার সাহায্যে মাছ ধরছেন। নৌকাটির বিশেষত্ব হলো, এটিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যবস্থা রয়েছে। নৌকার চারপাশে পানিতে সামান্য বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি করে র্যাঁচ মাছগুলোকে সাময়িকভাবে অবশ করে ফেলা হয়। এরপর জাল দিয়ে সেগুলোকে ধরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, র্যাঁচ মাছগুলো কত দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, তা পর্যবেক্ষণ করা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, র্যাঁচ মাছগুলো দেখতে অনেকটা সাপের মতো এবং এদের শরীর পিচ্ছিল হওয়ায় ধরা কঠিন। এরা রাতের বেলা বেশি সক্রিয় থাকে এবং সহজে লুকিয়ে থাকতে পারে। জলাশয়ে এদের উপস্থিতি স্থানীয় মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি স্বরূপ। কারণ র্যাঁচ মাছগুলো পরজীবী বহন করে এবং জলজ পরিবেশের ক্ষতি করে।
ডা. ড্যানিয়েল স্লোন, যিনি ইউএসজিএস-এর একজন গবেষক, জানিয়েছেন, “আমাদের স্থানীয় প্রজাতির থেকে র্যাঁচ মাছ আলাদা। এদের পৃষ্ঠীয় পাখনা নেই এবং পায়ের অংশও ছোট।”
এই অভিযানের অংশ হিসেবে বিজ্ঞানীরা একটি “ফিশ স্ল্যাম” করছেন। যেখানে তারা একদিনে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ ধরার চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে তারা প্রজাতিটির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভৌগোলিক বিস্তার সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।
শুধু র্যাঁচ মাছ নয়, বিজ্ঞানীরা কিউবান ট্রি ফ্রগ এবং অ্যাললিগেটরউইড-এর মতো অন্যান্য আগ্রাসী প্রজাতির বিস্তার নিয়েও উদ্বিগ্ন। কিউবান ট্রি ফ্রগ মানুষের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক নিঃসরণ করে, আর অ্যাললিগেটরউইড জলপথ বন্ধ করে দেয়, যা অবকাঠামোর ক্ষতি করে।
বিজ্ঞানীরা বন্যার কারণে আগ্রাসী প্রজাতিগুলোর বিস্তার কীভাবে হয়, তা জানতে গবেষণা করছেন। তাদের মতে, ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন হেলেন এবং মিলটনের (২০২৪) মতো ঘটনাগুলো র্যাঁচ মাছসহ অন্যান্য প্রজাতির বিস্তারে সহায়তা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাসের একটি শহরে হার্ভে ঘূর্ণিঝড়ের পরে বন্যার পানি দুটি নদীর সংযোগ ঘটিয়েছিল, যা জলজ প্রজাতিগুলোর জন্য নতুন পথ তৈরি করে দেয়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে আগ্রাসী প্রজাতির বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। তারা বলছেন, প্রতিটি অঞ্চলের জন্য ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হতে পারে, তাই স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: ইউএসজিএস