স্কটল্যান্ডের লুকানো রত্ন: বাইকের চাকায় গাঢ় সবুজ ঘেরা গ্যালোওয়ের পথে।
পর্যটকদের কাছে স্কটল্যান্ডের গ্যালোওয়ে অঞ্চলটি হয়তো একটু অপরিচিত। ইংল্যান্ডের সীমান্ত ঘেঁষা এই দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলটি (সরকারিভাবে ডামফ্রিস ও গ্যালোওয়ে নামে পরিচিত) যেন উত্তরমুখী পর্যটকদের ভিড়ে অনেকটা উপেক্ষিতই থাকে।
গ্লাসগো, লোখ লোমন্ড ও ট্রোস্যাকস ন্যাশনাল পার্ক এবং হাইল্যান্ডের দিকে ছুটতে গিয়ে অনেকেই হয়তো এই অঞ্চলের আকর্ষণগুলো অনুভব করতে পারেন না। অথচ, স্কটল্যান্ডের আসল স্বাদ পেতে হলে গ্যালোওয়ের জুড়ি মেলা ভার।
রবার্ট দ্য ব্রুস এবং উইলিয়াম ওয়ালেসের মতো কিংবদন্তিদের পদচারণায় মুখরিত এই ভূমি। এখানকার ছোট শহরগুলো তাদের সাদাসিধে জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত, আর এখানে রয়েছে পুরোনো অনেক দুর্গ, যা একসময় এখানকার যুদ্ধগুলোর সাক্ষী ছিল।
সবুজ বনভূমি, পাহাড় আর ঝর্ণা – প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেকোনো ভ্রমণকারীর মন জয় করে নেয়। সব মিলিয়ে, যারা একটু ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য গ্যালোওয়ে হতে পারে দারুণ একটি গন্তব্য।
g এটি মূলত একটি বিশেষ ধরনের সাইক্লিং, যেখানে কঠিন রাস্তা এবং মসৃণ পথ – দু’ধরনের পথেই বাইক চালানো যায়।
পাহাড়ী পথের আকর্ষণ আর সাধারণ রাস্তার অনাবিল স্বাধীনতার এক দারুণ মিশ্রণ হলো এই বাইকিং। গ্যালোওয়ের সুবিশাল বনভূমিগুলোতে বাইকের এই অভিযান দারুণ উপভোগ্য হতে পারে।
গ্যালোওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত গেটহাউস অফ ফ্লিট শহরের উত্তরে রয়েছে বিশাল গ্যালোওয়ে ফরেস্ট পার্ক। এটি ব্রিটেনের বৃহত্তম বনভূমিগুলোর মধ্যে অন্যতম, যার আয়তন প্রায় ৩০০ বর্গমাইল।
এখানে বাইক রাইডারদের জন্য রয়েছে অসংখ্য পথ। ২০২৩ সাল থেকে এখানে ইউনিয়ন সাইক্লিস্ট ইন্টারন্যাশনাল (UCI) ‘দ্য গ্রালচ’ নামে একটি বার্ষিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে, যেখানে প্রায় ২ হাজার সাইক্লিস্ট অংশ নেয়।
তবে, অপেশাদার বাইকারদের জন্য এখানে অপেক্ষাকৃত সহজ পথও রয়েছে।
গেটহাউস অফ ফ্লিট থেকে ন্যাশনাল সাইকেল রুট ৭ ধরে আপনি যেতে পারেন কাইরন্সমোর অফ ফ্লিট ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভে।
এখানকার পথে হেদার ফুল, ঘাস আর রোয়ান বেরির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে। এছাড়া, ‘বিগ ওয়াটার অফ ফ্লিট ভায়াডাক্ট’-এর (প্রায় ২৯ কিলোমিটার) আকর্ষণও কম নয়।
অথবা, আপনি চাইলে গেটহাউস অফ ফ্লিটের উত্তরে অবস্থিত ক্ল্যাটারিংশাওয়া লেক থেকে রেডার্স রোড ফরেস্ট ড্রাইভ ধরে পাইন গাছের সারি আর পাহাড়ের পাশ দিয়ে যেতে পারেন।
এই পথে আপনি একটি ভায়াডাক্ট পার হয়ে লখ গ্রানকের পাশ দিয়ে ফিরতে পারবেন (প্রায় ৪৫ কিলোমিটার)। এখানকার সবচেয়ে সুন্দর পথটি হলো ক্ল্যাটারিংশাওয়া থেকে ডি নদী উপত্যকা হয়ে গ্লেনট্রুল গ্রাম পর্যন্ত যাওয়া এবং ফেরা (প্রায় ৫৬ কিলোমিটার)।
ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করতে আরামদায়ক একটি আবাসনেরও প্রয়োজন।
গেটহাউস অফ ফ্লিটে অবস্থিত ‘দ্য মারে আর্মস’ হোটেলটি এক্ষেত্রে আদর্শ হতে পারে।
১৭৯৩ সালে স্কটিশ কবি রবার্ট বার্নস এই হোটেলেই ‘স্কটস হু হে’ নামের স্কটল্যান্ডের প্রথম অনানুষ্ঠানিক জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।
স্থানীয় দম্পতি ডানকন এবং ভিকি ম্যাককনচি ২০২৩ সালে হোটেলটি সংস্কার করেছেন। এখানে ১৪টি সুন্দর ঘর রয়েছে, যেখানে এক বা একাধিক ব্যক্তির থাকার ব্যবস্থা আছে।
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে সাজানো ঘরগুলো যেকোনো পর্যটকের মন জয় করবে।
এখানকার রেস্টুরেন্টে স্কটিশ খাবার পাওয়া যায়, যা বাইকিং শেষে আপনার ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক হবে। বার এলাকার আরামদায়ক পরিবেশে বসে আপনি পছন্দের পানীয়ের স্বাদ নিতে পারেন।
গ্যালোওয়ের আকর্ষণীয় দৃশ্য আর পাথুরে পথে বাইকিংয়ের সুযোগ, সব মিলিয়ে যারা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।