বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধে ত্রাণকর্তা? স্কট বেসেন্ট কি পারবেন?

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারী: বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধকে সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বেসেন্ট যে ভূমিকা রেখেছেন, তা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, বেসেন্টের কর্মপরিধি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে একটি পর্যালোচনা করা হলো, যা বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

স্কট বেসেন্ট, যিনি একসময় জর্জ সরোসের মতো ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করেছেন এবং ডেমোক্রেটদের অনুদান দিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের একজন প্রভাবশালী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত। বাণিজ্য আলোচনার জটিলতা নিরসনে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।

চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বেসেন্টের মূল লক্ষ্য হলো, বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকার নেতৃত্ব বজায় রাখা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করা।

বেসেন্টের রাজনৈতিক জীবন বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর, তিনি রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বেসেন্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শুধু নীতি নির্ধারণের সঙ্গে জড়িত নন, বরং বাজারের অস্থিরতা স্থিতিশীল রাখতেও চেষ্টা করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি প্রায়ই বাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়, সেই সময় বেসেন্ট আলোচনার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।

উদাহরণস্বরূপ, যখন ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্য এবং অ্যাপল আইফোনের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তখন বেসেন্ট দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে পদক্ষেপ নেন।

বেসেন্টের অভিজ্ঞতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ১৯৯২ সালে ব্রিটিশ পাউন্ডের বিরুদ্ধে বাজি ধরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মুনাফা অর্জন করা। এই অভিজ্ঞতা তাকে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক নীতি এবং বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি বিশ্ব অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে, যা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্য যুদ্ধ বা শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের পোশাক, চামড়া এবং অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে।

অন্যদিকে, আমদানি করা পণ্যের দামও বাড়তে পারে, যা মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে। তাই, বেসেন্টের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে।

উপসংহারে বলা যায়, স্কট বেসেন্ট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার কর্মদক্ষতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথকে প্রভাবিত করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর বাইরে নয়। তাই, বেসেন্টের কার্যক্রম এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের দিকে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা উচিত, যা আমাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *