কম্পিউটার গেম ও স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি: শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ। বর্তমান ডিজিটাল যুগে, শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায় কম্পিউটার গেম, স্মার্টফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অভিভাবকদের মধ্যে তাই একটা স্বাভাবিক উদ্বেগ কাজ করে—তাদের সন্তানেরা কতটা সময় এইসব ডিভাইসে ব্যয় করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা সেই উদ্বেগকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু স্ক্রিন টাইমের পরিমাণ নয়, বরং এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি শিশুদের আসক্তি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি মেডিকেল জার্নালে (JAMA) প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রায় ৪,০০০ শিশুর ওপর দীর্ঘ চার বছর ধরে সমীক্ষা চালানো হয়। গবেষণার মূল বিষয় ছিল—শিশুদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম, মোবাইল ফোন এবং ভিডিও গেম ব্যবহারের আসক্তি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ বা হতাশাজনিত সমস্যা বাড়ায় না। বরং, এইসব ডিভাইসের প্রতি আসক্তি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আসক্তির কারণে শিশুরা তাদের পড়াশোনা, খেলাধুলা বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এতটাই আসক্ত হয়ে পড়ে যে, ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করতে পারে না।
এই আসক্তি তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।
যারা অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলাও মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াতে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে স্ক্রিন আসক্তি কমাতে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে।
এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন—
- শিশুদের জন্য স্ক্রিন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলা।
- খাবার খাওয়ার সময় এবং রাতে ঘুমানোর আগে স্ক্রিন ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা।
- শিশুদের খেলাধুলা এবং বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে উৎসাহিত করা, যাতে তারা স্ক্রিনের বাইরেও আনন্দ খুঁজে পায়।
- বাবা-মায়ের নিজেদেরও ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত।
মনোবিদদের মতে, শিশুদের মধ্যে আসক্তির লক্ষণগুলো সম্পর্কে বাবা-মাকে সচেতন থাকতে হবে।
অতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—
- ডিভাইস ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং সবসময় সেটির প্রতি আকৃষ্ট থাকা।
- ব্যবহার কমাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়া।
- ব্যবহারের কারণে পড়াশোনা বা বন্ধুদের সঙ্গে সমস্যা তৈরি হওয়া।
- ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়ে মিথ্যা বলা বা তা লুকিয়ে রাখা।
- ডিভাইস ব্যবহার করতে না পারলে অস্থিরতা, রাগ বা দুঃখ অনুভব করা।
যদি কোনো শিশুর মধ্যে আসক্তির লক্ষণ দেখা যায়, তবে অভিভাবকদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এক্ষেত্রে সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে এবং তাদের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
প্রয়োজনে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, শিশুদের স্ক্রিন আসক্তি একটি গুরুতর সমস্যা এবং এর সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন