সমুদ্র শৈবাল বা সি মসের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। ত্বক উজ্জ্বল করা থেকে শুরু করে হজম ক্ষমতা বাড়ানো—এরকম নানা দাবি নিয়ে এটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
সম্প্রতি, বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক বিলিয়ন ডলারের একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে সি মস। ২০২৩ সালে এর বাজার ছিল ২.১৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সাল নাগাদ ২.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিন্তু সি মসের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে এত আলোচনা হলেও, এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। আসুন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সি মসের খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক।
**সি মস আসলে কী?**
সি মস এক ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল বা শ্যাওলা। এটিকে আয়ুর্বেদ এবং লোকাল চিকিৎসায় অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
এটি মূলত বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। বাজারে এটি শুকনো, জেল, পাউডার, ক্যাপসুল এবং “গামি” আকারে পাওয়া যায়।
**উপকারিতাগুলো কী কী?**
বিশেষজ্ঞদের মতে, সি মসে কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: সি মসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল থাকে, যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
- হজম ক্ষমতার উন্নতি: সি মসে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার থাকে, যা হজমক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- আয়োডিনের উৎস: সি মস-এ আয়োডিন পাওয়া যায়, যা থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়।
**ঝুঁকিগুলো কী কী?**
উপকারিতার পাশাপাশি, সি মসের কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকিও রয়েছে।
- ভারী ধাতু: সি মস সমুদ্র থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা হয় বলে এতে আর্সেনিক, পারদ, সীসা-এর মতো ভারী ধাতু থাকতে পারে। এই ধাতুগুলি শরীরে জমা হলে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ: অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু স্বাস্থ্য condition যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা অথবা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সি মস ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
**তাহলে কি সি মস ব্যবহার করা উচিত?**
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সি মস স্বাস্থ্যকর খাবারের একটি অংশ হতে পারে, তবে এটি কোনো “জাদুকরী খাবার” নয়।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
ডায়েটের ক্ষেত্রে, তাজা ফল ও সবজি, শস্য এবং প্রোটিনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
সি মস-এর বদলে আমাদের দেশে সহজলভ্য অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন – বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি, ফল, এবং ডিম-এর মতো খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
সি মস ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কারণ এটি সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক