বিখ্যাত ব্রাজিলীয় আলোকচিত্রী সেবাস্তিয়াও সালগাদো আর নেই। জীবনের ৮১ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। সালগাদো ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী শিল্পী, যিনি তাঁর ক্যামেরার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে তুলে ধরেছেন।
শুধু ছবি তোলাই নয়, মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনুকরণীয়।
সাবেক অর্থনীতিবিদ সালগাদো পেশাগত জীবনে ফটোগ্রাফিকে বেছে নিয়েছিলেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭০-এর দশকে তিনি ছবি তোলা শুরু করেন এবং দ্রুতই আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন।
তাঁর স্ত্রী লেলিয়ার ক্যামেরা হাতে ছবি তোলার শুরুটা ছিল যেন নিয়তিরই ইঙ্গিত। ১৯৮০ সালে তিনি বিখ্যাত ম্যাগনাম ফটোজে যোগ দেন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে আধুনিক সমাজের মানুষের জীবনকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন।
সাগালদোর কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর গভীরতা এবং মানবিকতা। তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন মানুষের কষ্ট আর সংগ্রামের চিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে।
রুয়ান্ডার গণহত্যা, মোজাম্বিকের গৃহযুদ্ধ, কিংবা কুয়েতের তেলকূপের অগ্নিকাণ্ড—এমন বহু ঘটনার সাক্ষী সালগাদোর ক্যামেরা।
‘জেনেসিস’ এবং ‘আমাজোনিয়া’র মতো বিখ্যাত প্রকল্পে তিনি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এবং আদিবাসী জনজীবনের ছবি তুলেছেন, যা আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে।
সাগালদোর তোলা ছবিগুলো সাধারণত সাদা-কালোতে প্রকাশিত হতো। তাঁর ছবিতে আলো-ছায়ার খেলা এবং গভীরতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
সাদা-কালো ছবিতে তিনি মানুষের কষ্ট, প্রকৃতির সৌন্দর্য, যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের বিভীষিকা—এসব কিছুই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর ছবিগুলো গ্যালারি ও জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ফটোগ্রাফির পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায়ও তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
১৯৯৮ সালে তিনি ‘ইনস্টিটিউটো টেরা’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ব্রাজিলের রিও ডোস ভ্যালি অঞ্চলে বৃক্ষরোপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সালগাদো মনে করতেন, মানুষ সম্পর্কে তিনি হতাশ হলেও প্রকৃতির উপর তাঁর অগাধ আস্থা ছিল। তাঁর মতে, প্রকৃতি অবশ্যই টিকে থাকবে।
২০১৪ সালে জার্মান পরিচালক উইম ওয়েন্ডার্স এবং সালগাদোর ছেলে জুলিয়ানো রিবেইরো সালগাদো যৌথভাবে ‘দ্য সল্ট অফ দ্য আর্থ’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন, যেখানে সেবাস্তিয়াও সালগাদোর জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
সেবাস্তিয়াও সালগাদো শুধু একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন গল্পকারও।
তাঁর তোলা প্রতিটি ছবি যেন এক একটি গল্প। তাঁর কাজ আমাদের দেখায় কীভাবে একজন মানুষ তাঁর ক্যামেরার মাধ্যমে বিশ্বকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারে। তাঁর প্রয়াণে বিশ্ব হারালো একজন অসাধারণ শিল্পী, যিনি মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকবেন চিরকাল।
তথ্য সূত্র: The Guardian