যুদ্ধকালীন ভালোবাসার এক অন্যরকম গল্প: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হাতে তুলে নিলেন উত্তরসূরিরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুধু ধ্বংস আর বিভীষিকার স্মৃতি নিয়ে আসেনি, সেই সাথে নিয়ে এসেছে ভালোবাসার কিছু অসাধারণ গল্প। সম্প্রতি এমনই এক ভালোবাসার উপাখ্যান সামনে এসেছে, যা যুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝেও মানুষের মনের গভীরতাকে তুলে ধরে। ঘটনাটি হলো, এক দম্পতির যুদ্ধকালীন চিঠিপত্রের সংগ্রহ, যা তাদের নাতি-নাতনীদের হাত ধরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
ইংল্যান্ডের বাসিন্দা জেরার্ড ফে ছিলেন একজন সাংবাদিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত হন। আর তার স্ত্রী অ্যালিস, যিনি ‘লল’ নামেই পরিচিত ছিলেন, তখন তাদের সন্তানদের নিয়ে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে বসবাস করতেন।
যুদ্ধের কঠিন দিনগুলোতে তাদের মধ্যে নিয়মিত চিঠি আদান-প্রদান হতো। এই চিঠিগুলোই পরবর্তীতে তাদের নাতি-নাতনীদের হাতে আসে, যারা তাদের ভালোবাসার এই অমূল্য দলিল সংরক্ষণ করেছেন।
জেরার্ড এবং ললের চিঠিতে যুদ্ধের সময়ের নানা ঘটনার পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতির গভীরতাও ফুটে উঠেছে। যুদ্ধের বিভীষিকা, খাদ্য সংকট, শিশুদের অসুস্থতা, এই সবকিছুর মধ্যেও তারা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন জুগিয়েছেন।
চিঠিতে তাদের দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও উঠে এসেছে, যা তাদের সম্পর্কের গভীরতা প্রমাণ করে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্ন দেখতেন, যা যুদ্ধের ভয়াবহতার বিপরীতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
জেরার্ডের নাতি, ম্যাথিউ ফে, এবং তার স্ত্রী রসানা গ্রীনস্ট্রিট, তাদের দাদার এই চিঠিগুলো খুঁজে পান। তারা সিদ্ধান্ত নেন, এই মূল্যবান স্মৃতিগুলো সবার সামনে তুলে ধরবেন। প্রথমে তারা চিঠিগুলো একত্রিত করে একটি বই আকারে প্রকাশ করেন।
এরপর তারা এটিকে আরও বড় পরিসরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি নাট্যরূপ দেন। ‘ডিয়ার লল: আ ওয়ারটাইম ম্যারেজ ইন লেটার্স’ (Dear Loll: A Wartime Marriage in Letters) শিরোনামের এই নাটকটি এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নাটকে অভিনয় করেছেন ডেজি ওয়াটারস্টোন এবং চার্লি হামলেট-এর মতো জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী।
যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষের জীবনযাত্রা কতটা কঠিন ছিল, তা এই চিঠিগুলো থেকে স্পষ্ট হয়। একদিকে সেনাদের যুদ্ধযাত্রা, অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের টিকে থাকার সংগ্রাম – এই দুইয়ের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন কিভাবে টিকে ছিল, তা সত্যিই এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
এই চিঠিপত্রগুলো শুধু দুটি মানুষের ভালোবাসার গল্প নয়, বরং যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মানুষের টিকে থাকার অদম্য ইচ্ছার এক জীবন্ত দলিল। ম্যাথিউ ফে-এর মতে, এই চিঠিগুলো যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, যা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: The Guardian