স্বপ্নভঙ্গ! সেনেগালে বিশাল জমি চুক্তি, মার্কিন কোম্পানির করুণ পরিণতি!

শিরোনাম: সেনেগালের কৃষিতে মার্কিন কোম্পানির ব্যর্থ বিনিয়োগ: স্বপ্নভঙ্গ ও অনিশ্চয়তা

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালে বিশাল কৃষি প্রকল্প গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি মার্কিন কোম্পানি বিনিয়োগ করেছিল। দেশটির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে শুরুটা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায়।

কয়েক হাজার হেক্টর জমির ওপর স্থাপিত প্রকল্পটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, শ্রমিকদের বেতন বকেয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

মার্কিন কোম্পানি ‘আফ্রিকান এগ্রিকালচার’-এর এই ব্যর্থতার গল্প যেন আফ্রিকার মাটিতে বিদেশি বিনিয়োগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে সেনেগালের একটি বিশাল অঞ্চলকে আধুনিক কৃষি খামারে রূপান্তরের পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।

জানা যায় কোম্পানিটি মূলত আলফালফা ঘাস উৎপাদন করে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করতে চেয়েছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আলফালফা উৎপাদন কমে যাওয়ায় তারা এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চেয়েছিল।

২০২১ সালে, ‘আফ্রিকান এগ্রিকালচার’-এর কর্ণধার ফ্রাঙ্ক টিমিস এবং গোরা সেক স্থানীয় ‘নিয়েতি ইয়োন’ গ্রামে যান। তাঁদের প্রতিশ্রুতি ছিল, কয়েকশ স্থানীয় বাসিন্দার কর্মসংস্থান হবে এবং একসময় এই সংখ্যা হাজারে পৌঁছাবে।

টিমিস ছিলেন মূলত রোমানিয়ার নাগরিক, যিনি এর আগে পশ্চিম আফ্রিকায় খনিজ সম্পদ ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। সেনেগালের এই প্রকল্পটি ছিল তাঁর একটি নতুন উদ্যোগ।

কোম্পানিটি প্রথমে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নেওয়ার পরিকল্পনা করে এবং এরপর সেটির অনুমোদন লাভের চেষ্টা করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ কেউ এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

কিন্তু তাঁদের সেই স্বপ্ন বেশি দিন টেকেনি। স্থানীয় ডাউডু এনডিয়ায়ে এমবুপ নামের এক ব্যক্তি বলেছিলেন, “আমি তাদের স্বপ্ন কিনেছিলাম। আমি দেখেছি হাজার হাজার তরুণ-তরুণী চাকরি করছে এবং সমৃদ্ধ জীবন যাপন করছে।”

শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও, প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্রুতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ার বাজারে অর্থ সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়ার পর এর দুর্বলতাগুলো প্রকাশ হতে থাকে।

জানা যায় কোম্পানিটি ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যায়ন দেখিয়েছিল, যা নিয়ে পরিবেশ বিষয়ক সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলেছিল।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর, কোম্পানিটি প্রত্যাশিত ফল লাভ করতে ব্যর্থ হয়। শেয়ারের দাম কমতে থাকে এবং এক বছরের মধ্যে তা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে।

বর্তমানে, প্রকল্পের জমিতে নিরাপত্তা রক্ষীরা পাহারা বসিয়েছে এবং স্থানীয় কৃষক ও রাখালদের সেখানে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের ছয় মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে, এমবুপের মতো অনেকে তাঁদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ধার-দেনা করতে বাধ্য হয়েছেন।

আফ্রিকান এগ্রিকালচারের এই ব্যর্থতার পর, এর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালান কেসলার ক্যামেরুন ও কঙ্গোতে আরও বড় একটি কৃষি প্রকল্প শুরু করেছেন। তিনি ৮৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে, তাঁর নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

আফ্রিকার দেশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগের এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে উপেক্ষা করে বিদেশি কোম্পানিগুলো মুনাফা লাভের চেষ্টা করে, যা শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মানুষের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনে।

সেনেগালের এই ঘটনাটি আমাদের সামনে সেই বাস্তবতাই তুলে ধরে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *