রাশিয়ার ‘খুনের’ হুমকি: ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগে তোলপাড়!

সার্বিয়া কি গোপনে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে? এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রাশিয়া ও সার্বিয়ার মধ্যে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। মস্কো অভিযোগ করেছে, কিয়েভকে সার্বিয়ার তৈরি গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়েছে, যা তাদের ভাষায় ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ করার শামিল।

এর পরেই দুই দেশ যৌথভাবে বিষয়টি তদন্ত করতে রাজি হয়েছে।

রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআর (SVR) এই অস্ত্র সরবরাহকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা জানিয়েছে, সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্প ন্যাটো-সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মাধ্যমে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাচ্ছে।

এই তালিকায় চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলো ছাড়াও কিছু আফ্রিকান দেশের নামও রয়েছে। এসভিআর-এর মতে, এই অস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘রুশ সামরিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের হত্যা ও আহত করা’।

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিস রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএসকে (RTS) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অভিযোগগুলো যাচাই করার কথা জানান।

তবে তিনি কিছু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি আরও জানান, চলতি মাসের শুরুতে মস্কো সফরের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে তার কথা হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই সার্বিয়া একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক বজায় রেখেছে, অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

যদিও জাতিসংঘে তারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করেছে, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় এখনো যোগ দেয়নি।

২০২৩ সালে ফাঁস হওয়া একটি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (পেন্টাগন) নথি অনুযায়ী, সার্বিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক নিরপেক্ষতা ঘোষণা করলেও, তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করতে রাজি হয়েছিল।

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় অভিযান শুরু করার পর থেকে, বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সার্বিয়া অন্তত ৯৮ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের গোলাবারুদ ইউক্রেনে রপ্তানি করেছে।

এই তথ্য জানিয়েছে ‘দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস’। বর্তমান বাজার অনুযায়ী, এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি।

উল্লেখ্য, সার্বিয়ার অস্ত্র শিল্প মূলত সোভিয়েত আমলের নকশার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ফলে তাদের উৎপাদিত অস্ত্রশস্ত্র রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের উপযোগী।

যদিও রাশিয়া এখনো সার্বিয়ার প্রধান গ্যাস সরবরাহকারী এবং তাদের একমাত্র তেল শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে, তবুও প্রেসিডেন্ট ভুসিস কয়েকবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, সার্বিয়ার এই দ্বি-মুখী নীতি একদিকে যেমন রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চাইছে, তেমনিভাবে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের পথ সুগম করতে চাইছে।

তবে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ তাদের এই কূটনৈতিক কৌশলে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *