আতঙ্কের শব্দ! সার্বিয়ার বিক্ষোভে কি শব্দ বোমা?

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে সরকার বিরোধী এক বিক্ষোভে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনী এক ধরণের শব্দ বোমা ব্যবহার করে তাদের উপর আক্রমণ করেছে।

যদিও দেশটির সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গত ১৫ই মার্চ, ২০২৩ তারিখে বেলগ্রেডে একটি বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে সবকিছু শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই এক ধরণের তীব্র শব্দ শোনা যায়।

শব্দটির উৎস বোঝা যাচ্ছিল না, তবে এর পরেই সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দিকবিদিক ছুটতে শুরু করে।

শব্দটির তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, অনেকের মাথা ঘোরা, কানে যন্ত্রণা এবং বমি ভাব হয়।

এই ঘটনার পর, মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করে যে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সম্ভবত শব্দতরঙ্গ তৈরি করতে সক্ষম এমন কোনো বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। একে ‘শব্দ কামান’ বা ‘সনিক ওয়েপন’ও বলা হয়।

এই ধরনের অস্ত্র শব্দ তরঙ্গ তৈরি করে যা মানুষের শ্রবণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিও করতে পারে।

ঘটনার পর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা যখন নীরবতা পালন করছিলেন, তখন হঠাৎ করেই তারা আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াতে শুরু করেন। এরপরই একটি তীব্র শব্দ শোনা যায়।

সার্বিয়ার সরকার প্রাথমিকভাবে এই ধরনের কোনো অস্ত্র ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে।

তবে পরে তারা স্বীকার করে যে, তাদের কাছে শব্দ তরঙ্গ তৈরি করার যন্ত্র আছে, যা মূলত সতর্কবার্তা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। তারা দাবি করে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।

এই ঘটনার পর, সার্বিয়ার বিরোধী দল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তারা জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছে।

এরই মধ্যে, ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতও (European Court of Human Rights) বিষয়টি আমলে নিয়েছে এবং সার্বিয়া সরকারকে জবাবদিহি করার নির্দেশ দিয়েছে।

তবে, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুসিস (Aleksandar Vucic) এই অভিযোগকে পশ্চিমা বিশ্বের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।

দেশটির সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দ অস্ত্রের ব্যবহার গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর এক ধরনের সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে, ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *