শিরোনাম: লন্ডনে সের্পেন্টাইন প্যাভিলিয়ন: এক বাঙালি স্থপতির স্বপ্নপূরণ
লন্ডনের কেনসিংটন গার্ডেনে নির্মিত হয়েছে সের্পেন্টাইন প্যাভিলিয়নের নতুন সংস্করণ। আর এবারের প্যাভিলিয়নটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। বিশ্বজুড়ে স্থাপত্যকলার জগতে এটি নিঃসন্দেহে এক বিরাট অর্জন, যা একইসাথে বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।
প্রতি বছরই এই প্যাভিলিয়ন নির্মাণের সুযোগ পান এমন একজন স্থপতি, যিনি আগে যুক্তরাজ্যে কোনো কাজ করেননি।
মেরিনা তাবাসসুমের ডিজাইন করা এবারের প্যাভিলিয়নের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এ ক্যাপসুল ইন টাইম’ বা ‘কালের একটি ক্ষুদ্র রূপ’। কাঠের তৈরি এই কাঠামোটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি মাঝারি আকারের জিঙ্কগো গাছ।
এই গাছটি বিরূপ আবহাওয়াতেও টিকে থাকতে পারে। মেরিনা তাবাসসুম তার কাজে সব সময়ই প্রকৃতির প্রতি মনোযোগ দেন।
আলো নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন তিনি। তার মতে, রোদ ঝলমলে দিনে প্যাভিলিয়নটি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, আবার রোদ না উঠলেও ভেতরের আলো এক ভিন্ন আবহ তৈরি করবে।
মেরিনা তাবাসসুম শুধু একজন স্থপতিই নন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রেও তিনি পরিচিত। এর আগে তিনি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য বন্যা প্রতিরোধী, সহজে বহনযোগ্য ঘর তৈরি করেছেন।
নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য তৈরি করা তার এই বাড়িগুলো ছিল খুবই উপযোগী। তাই, প্যাভিলিয়ন নির্মাণের এই কাজটি তার কাছে খুব একটা কঠিন ছিল না।
বরং বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে এই কাজে আরও বেশি সাহায্য করেছে।
২০০০ সাল থেকে সের্পেন্টাইন গ্যালারি এই প্যাভিলিয়ন নির্মাণের দায়িত্ব দিয়ে আসছে। এই পর্যন্ত যারা এই প্যাভিলিয়ন ডিজাইন করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
তাদের ডিজাইন করা প্যাভিলিয়নগুলো শুধু স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকেই অসাধারণ নয়, বরং তা পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।
এই প্যাভিলিয়নগুলো অনেক সময় বিভিন্ন শহরে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেগুলোকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হয়।
সের্পেন্টাইন প্যাভিলিয়নের প্রথম ডিজাইনটি করেছিলেন খ্যাতিমান স্থপতি এবং শিল্পী জাঁহা হাদিদ। এরপর রেম কুলহাস, ফ্রাঙ্ক গেহরি, এবং আরও অনেকে এই ডিজাইন করেছেন।
এমনকি যারা তেমন পরিচিত নন, সেরকম অনেক স্থপতিও এই প্যাভিলিয়ন ডিজাইন করে নিজেদের পরিচিতি এনেছেন।
এই প্যাভিলিয়নগুলো অনেক সময় আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং নতুন সুযোগের দ্বার খুলে দেয়।
মেরিনা তাবাসসুমের এই অর্জন বাংলাদেশের স্থাপত্যকলার জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার কাজের মাধ্যমে, বিশ্ব আরও একবার বাংলাদেশের সৃজনশীলতাকে দেখবে।
আমরা আশা করি, তার এই কাজটি শুধু একটি প্যাভিলিয়ন হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন