গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং অবরোধের অবসান ঘটাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাতটি ইউরোপীয় দেশ। দেশগুলো হলো আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, স্লোভেনিয়া, স্পেন এবং নরওয়ে।
এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটছে, যা তাদের চোখের সামনে হচ্ছে, আর তারা এই বিষয়ে নীরব থাকতে পারে না।
ইউরোপীয় দেশগুলোর এই উদ্বেগের কারণ হলো ইসরায়েলের অবরোধ, যার ফলে গত আড়াই মাস ধরে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিবৃতিতে ইসরায়েলকে অবিলম্বে তাদের বর্তমান নীতি পরিবর্তন করতে এবং সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দ্রুত ও বাধাহীনভাবে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করার জন্য তারা বলেছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে ৫০,০০০ এর বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে আরও অনেকে অনাহারে মারা যেতে পারে।
এদিকে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে কাজ করা ইউরোপ কাউন্সিলের পক্ষ থেকেও গাজায় ‘পরিকল্পিতভাবে অনাহার’ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
তারা সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল এই অঞ্চলে ‘পরবর্তী হামাস’ তৈরির বীজ বুনছে। ইউরোপ কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিবেদক ডোরা বাকোয়ান্নিস বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি আচরণের বিষয়ে নৈতিক হিসাব মেলানোর সময় এসেছে, এবং সেটি অনেক আগেই আসা উচিত ছিল।
জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, সাহায্য বিতরণের জন্য ইতোমধ্যেই ১ লক্ষ ৬০ হাজার ত্রাণসামগ্রী এবং ৯,০০০ ট্রাক প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বিকল্প কোনো পদ্ধতির প্রস্তাবের পরিবর্তে দ্রুত ত্রাণ বিতরণের ওপর জোর দিয়েছেন। ফ্লেচারের মতে, তাদের কাছে এরই মধ্যে একটি পরিকল্পনা রয়েছে, জনবল রয়েছে, বিতরণের নেটওয়ার্ক রয়েছে, এবং মাঠপর্যায়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের আস্থা রয়েছে।
তিনি জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক নাগরিকদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২রা মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশে বাধা দিয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থা ও অন্যান্য মানবিক সংগঠনগুলো সতর্ক করেছে যে, এই অঞ্চলে খাদ্য, জ্বালানি ও ঔষধের সরবরাহ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এতে প্রায় ২৪ লক্ষ ফিলিস্তিনি মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়েছে।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল জানায়, তারা একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে, যার মাধ্যমে একটি এনজিও’র মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ করা হবে, তবে তা হামাসের হাতে যেতে দেওয়া হবে না।
তবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলা হয়েছে, এটি নিরপেক্ষ, পক্ষপাতহীন বা স্বাধীন নয়। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, তারা হামাসকে বন্দীমুক্ত করতে ‘সামরিক চাপের’ পাশাপাশি এই অবরোধ বজায় রেখেছে।
অন্যদিকে, হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করানো অপরিহার্য।
খাদ্য, পানি ও ঔষধের প্রবেশাধিকার কোনো আলোচনার বিষয় হতে পারে না, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা