একসাথে খাবার: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা জরুরি?

পরিবারের সাথে খাবার: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান যুগে ব্যস্ত জীবনযাত্রায় আমরা যেন একটু বেশিই একা হয়ে যাচ্ছি।

কর্মব্যস্ততা, প্রযুক্তির অতি ব্যবহার, এবং নগরায়নের ফলে মানুষ ধীরে ধীরে তার সামাজিক বন্ধন থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে যেখানে সকলে একসাথে বসে খাবার খাওয়ার চল ছিল, সেখানে এখন একক পরিবারগুলোতে এই দৃশ্যটি প্রায়ই দেখা যায় না।

কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবারের সাথে খাবার খাওয়ার অভ্যাস আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে খাবার খান, তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং তারা একাকীত্ব বোধ কম করেন।

‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, যেসব দেশে মানুষজন একসাথে খাবার খায়, সেখানে সামাজিক সমর্থন বেশি থাকে এবং একাকীত্বের হারও কম থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে খাবার ভাগ করে খাওয়ার সংস্কৃতি এখনো বেশ প্রচলিত। একইভাবে, মালয়েশিয়া, প্যারাগুয়ে, সেনেগাল, এবং গাম্বিয়ার মতো দেশগুলোতেও পরিবারের সাথে খাবার খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে একাকী খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে এক চতুর্থাংশ মানুষ একাই খাবার খান। এই পরিস্থিতিতে, পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার গুরুত্ব আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে।

কারণ, খাবার খাওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়তা করে। খাবার টেবিলে বসে গল্প করা, হাসি-ঠাট্টা করা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করা—এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

বাংলাদেশে, যৌথ পরিবারের ধারণা এখনো বিদ্যমান। উৎসব-অনুষ্ঠানগুলোতে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে খাবার খাওয়ার একটি ঐতিহ্য রয়েছে।

ঈদ, পূজা কিংবা অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হন এবং একসাথে বসে খাবার খান। এই ধরনের আয়োজনগুলি শুধু আনন্দ দেয় না, বরং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে তোলে।

কিন্তু আধুনিক জীবনে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে, মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। কর্মব্যস্ততা এবং সময়ের অভাবের কারণে অনেকেই পরিবারের সাথে বসে খাবার খাওয়ার সুযোগ পান না।

অফিসের কাজ, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা, বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপ—এসবের মধ্যে খাবার খাওয়ার সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতেও পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার অভ্যাসটিকে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। বাবা-মায়েদের চেষ্টা করতে হবে, যেন তারা সন্তানদের সঙ্গে অন্তত একটি বেলার খাবার একসাথে খান।

এর ফলে, সন্তানদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং তারা একাকীত্ব অনুভব করবে না।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। খাবারের সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা ও মতবিনিময় হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়া, শিশুদের মধ্যে ভালো খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয় এবং তারা খাবারের প্রতি আরও আগ্রহী হয়।

সবশেষে, বলা যায়, পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার অভ্যাস শুধুমাত্র একটি ভালো অভ্যাস নয়, বরং এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনের জন্য অপরিহার্য।

তাই, আসুন, আমরা সবাই চেষ্টা করি আমাদের পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়ার এই সুন্দর সংস্কৃতিটিকে টিকিয়ে রাখতে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *