রেকর্ড! কীভাবে একটি হাঙর এত পথ সাঁতরালো?

শিরোনাম: রেকর্ড সৃষ্টিকারী হাঙরের সমুদ্রযাত্রা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা

গত বছর, নাইজেরিয়ার উপকূলের কাছে আট ফুট লম্বা একটি স্ত্রী বুল শার্ক (Bull Shark) মাছ ধরা পরে, যা ছিল এক অসাধারণ ঘটনার সাক্ষী। ঘানার ক্যাপ্টেন তুরাওয়া হাকিম-এর নেতৃত্বে থাকা একটি ফিশিং ট্রলারের জালে আটকা পরেছিল এই হাঙরটি।

পরে জানা যায়, এটি প্রায় ৭,২৩৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে এসে পৌঁছেছে, যা এই প্রজাতির কোনো হাঙরের ক্ষেত্রে দীর্ঘতম সমুদ্রযাত্রার রেকর্ড।

এই বিরল ঘটনার সূত্রপাত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার মোজাম্বিক চ্যানেল থেকে। এরপর হাঙরটি আফ্রিকা মহাদেশের চারপাশ ঘুরে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে নাইজেরিয়ার কাছাকাছি আসে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পরিবেশের পরিবর্তন হওয়ায় এমনটা ঘটছে।

আফ্রিকার এই অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে। এর ফলে অনেক সামুদ্রিক প্রাণী, যেমন – হাঙর, তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।

সাধারণত বুল শার্ক গভীর সমুদ্র এড়িয়ে চলে, উষ্ণ ও অগভীর জল তাদের বেশি পছন্দের। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তারা নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।

ক্যাপ্টেন হাকিমের জালে ধরা পড়ার পর, হাঙরটির শরীরে পাওয়া যায় একটি বিশেষ ট্যাগ, যাতে গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য ছিল।

এই ট্যাগ থেকে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন হাঙরটির এই বিশাল সমুদ্রযাত্রার কথা।

গবেষকরা বলছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের উপর যে প্রভাব পড়ছে, সে সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

বিশেষ করে, বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রজাতি কীভাবে তাদের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন আনছে, তা বোঝা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জন্য এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের দেশও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।

এমন পরিস্থিতিতে, হাঙরের এই সমুদ্রযাত্রা আমাদের সতর্ক করে দেয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে, সমুদ্র ও তার প্রাণীদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে হবে। স্থানীয় জেলেদের সহযোগিতা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা সমুদ্রের পরিবেশ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পেতে পারি।

এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পরিবেশে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও গবেষণা বাড়ানো দরকার।

একইসঙ্গে, পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই মৎস্য আহরণের উপর জোর দেওয়া উচিত।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *