আতঙ্কের ছবি! কর্মক্ষেত্র ছাড়ছেন নারীরা, বাড়ছে ‘শি-সেশন’?

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মজীবী নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার নারী কর্মক্ষেত্র ছেড়েছেন। এই সংখ্যাটি একটি বড় উদ্বেগের কারণ, কারণ এর ফলে একদিকে যেমন নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে বিদায় নেওয়ার যে প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, এটি তারই পুনরাবৃত্তি।

যদিও মহামারীর সময়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল, তবে বর্তমান পরিস্থিতিও মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিশু পরিচর্যা এবং শিক্ষার ক্রমবর্ধমান খরচ।

উন্নত দেশগুলোতেও যেখানে নারীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বেশি, সেখানেও শিশুদের দেখাশোনার খরচ অনেক পরিবারকে চাপে ফেলেছে।

এছাড়াও, অফিসের কাজে ফেরার বাধ্যবাধকতা অনেক কর্মীর জন্য বিশেষ করে মায়েদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

কারণ অনেক ক্ষেত্রে কর্মীরা আগের মতো নমনীয়তার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর পাশাপাশি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত বিস্তার এবং দুর্বল শ্রমবাজারের কারণে শ্বেতাঙ্গ কর্মী ও গ্রাহক পরিষেবা খাতেও চাপ বাড়ছে।

এর ফলস্বরূপ, অনেক নারী হয়তো চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেজনক, কারণ নারীরা কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে সরে গেলে তাদের উপার্জন কমে যায়।

শুধু তাই নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে।

কারণ, পরিবারের উপার্জন কমে গেলে শিশুদের ওপরও তার প্রভাব পড়ে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পরিবর্তনের শিকার হচ্ছেন মূলত উচ্চশিক্ষিত নারীরা, যাদের সন্তান পাঁচ বছরের কম বয়সী।

এছাড়া, কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যেও চাকরি ছাড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল অর্থনীতিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষজন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সরকারি খাতে নারীদের সংখ্যা কমানো এবং নারী-অধিকার ও বৈষম্য বিরোধী নীতি দুর্বল করার মতো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

তবে, হোয়াইট হাউস থেকে নারীদের সহায়তার জন্য কিছু পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে, যেমন শিশুদের জন্য বিনিয়োগ হিসাব তৈরি করা এবং শিশু করছাড় বৃদ্ধি করা।

এই পরিস্থিতিতে, যারা কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন।

কেউ কেউ কর্মক্ষেত্রের বৈষম্য, মানসিক চাপ অথবা পরিবারের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আবার, অনেকের ক্ষেত্রে ভালো বেতনের চাকরিও অর্থনৈতিক কারণে ছাড়তে হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য নমনীয় কর্মপরিবেশ, উপযুক্ত শিশু পরিচর্যা সুবিধা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

একইসঙ্গে, নারীদের জন্য উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে, যা তাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *