মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান Shein এবং Temu-এর মতো ই-কমার্স সাইটগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে।
সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের ফলে এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা ছোট আকারের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্তির সুবিধা বাতিল করেছে।
এর ফলে, এখন থেকে এই সাইটগুলো থেকে পণ্য আমদানি করতে অতিরিক্ত খরচ হতে পারে, যা গ্রাহকদের জন্য পণ্যের দাম বাড়াতে পারে।
এই ‘ডি মিনিমিস’ (de minimis) নিয়মটি মূলত ছোট মূল্যের পণ্য শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দিত।
সাধারণত, এই সুবিধা ব্যবহার করে Shein এবং Temu-এর মতো কোম্পানিগুলো চীন থেকে আসা স্বল্প মূল্যের পণ্য সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতো। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে এই ধরনের পণ্যের ওপর শুল্ক দিতে হবে।
এর ফলে, একদিকে যেমন কোম্পানিগুলোর খরচ বাড়বে, তেমনই অনেক পণ্যের দামও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কম আয়ের মানুষজন, যারা সাধারণত এই ধরনের সস্তা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।
কারণ, শুল্ক বাড়লে তাদের পক্ষে জিনিসপত্র কেনা কঠিন হয়ে পড়বে। আগে, এই কোম্পানিগুলো ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর মাধ্যমে পণ্য পাঠিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করত, কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী পণ্যের উৎপত্তিস্থল ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বর্তমানে, মার্কিন কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ (CBP) প্রতিদিন প্রায় ৪০ লক্ষ শুল্কমুক্ত ‘ডি মিনিমিস’ পণ্য চালান প্রক্রিয়া করে থাকে।
এর মধ্যে সিংহভাগই আসে চীন ও হংকং থেকে। গত অর্থবছরে প্রায় ১৩৬ কোটি প্যাকেজ এই নিয়মের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে।
নতুন এই নিয়ম কার্যকর হলে, আন্তর্জাতিকভাবে পাঠানো অধিকাংশ পণ্যের ওপর শুল্ক দিতে হবে।
শুল্কের পরিমাণ নির্ভর করবে পণ্যের উৎস দেশের শুল্ক হারের ওপর। উদাহরণস্বরূপ, যে দেশের শুল্ক হার ১৬ শতাংশের কম, সেখানে প্রতি পণ্যের জন্য প্রায় ৮০ ডলার শুল্ক দিতে হবে।
এছাড়া, এই পরিবর্তনের ফলে অ্যামাজন (Amazon) ও টিকটক শপ (TikTok Shop)-এর মতো অন্যান্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যদিও Shein এবং Temu এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে জানা গেছে যে তারা এরই মধ্যে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।
কিছু ক্ষেত্রে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য মজুদ করতে শুরু করেছে, যাতে দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া যায়।
এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়বে, সেদিকে এখন সকলের নজর রয়েছে।
কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিপথকে নতুন দিকে চালিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন