শেকু কানেহ-ম্যাসন: ‘কৃষ্ণবর্ণ এবং ক্লাসিক্যালকে একসঙ্গে স্থাপন করতে হয়েছিল’

শেখু কানেহ-মেসন: সঙ্গীতের দুনিয়ায় এক কৃষ্ণাঙ্গ সেলিব্রিটির সংগ্রাম

সংগীতের জগত সবসময়ই যেন বর্ণময়। সুরের মূর্ছনায় এখানে বাঁধা পড়ে শিল্পীর মন, আর সেই সুরের টানেই মুগ্ধ হন শ্রোতারা।

তবে এই সুন্দর জগতে, একজন কৃষ্ণাঙ্গ সেলোবাদক হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করাটা সহজ ছিল না। সম্প্রতি প্রকাশিত এক বইয়ে নিজের সেই সংগ্রামের কথা জানিয়েছেন শেখু কানেহ-মেসন।

শেখু কানেহ-মেসন, যিনি বিবিসি ইয়ং মিউজিশিয়ান পুরস্কার জয়ী, তাঁর সঙ্গীত জীবন শুরু করেছিলেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে।

যখন তিনি এই পুরস্কার জেতেন, চারপাশে আনন্দের ঢেউ উঠলেও, সেই আনন্দ যেন খানিকটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল কিছু মানুষের সমালোচনায়।

তাঁর গায়ের রং এবং তাঁর সাফল্যের মধ্যে একটা যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছিল। অনেকের ধারণা ছিল, তিনি হয়তো তাঁর যোগ্যতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন, কারণ তিনি কৃষ্ণাঙ্গ।

এই ধরনের মন্তব্যগুলো যেন গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল তাঁর মনে।

শেখু তাঁর বইয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন।

সেটি হল, যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্য।

সেখানকার নামকরা কিছু বিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষার সুযোগ থাকলেও, দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য তেমন সুযোগ নেই।

এই সুযোগের অভাব মেধাবী তরুণদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

শেখু’র জীবনে ‘রুল ব্রিটানিয়া’ গানটি নিয়েও একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

এই গানটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

তিনি যখন বিবিসি প্রোমসের শেষ রাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, তখন এই গানটি পরিবেশন করা হয়।

সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকের মতোই শেখুও এই গানটির কথা এবং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে অস্বস্তি অনুভব করেছিলেন।

তাঁর মতে, এই গানটি সাম্রাজ্যবাদের গৌরবকে তুলে ধরে, যা অনেকের কাছেই বেদনাদায়ক।

শেখু’র এই অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমাদের সমাজের একটি প্রতিচ্ছবি।

যেখানে একজন শিল্পীকে শুধুমাত্র তাঁর প্রতিভার জন্য নয়, বরং তাঁর গায়ের রং বা সামাজিক অবস্থান দিয়েও বিচার করা হয়।

সঙ্গীতের মতো একটি সর্বজনীন মাধ্যমেও যদি এই ধরনের বৈষম্য দেখা যায়, তবে তা সত্যিই দুঃখজনক।

শেখু কানেহ-মেসন-এর এই গল্প শুধু একজন শিল্পীর নয়, বরং এটি একটি সংগ্রামের গল্প।

এই সংগ্রাম একজন কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পীর, যিনি সঙ্গীতের দুনিয়ায় নিজের জায়গা করে নিতে লড়ে গিয়েছেন।

তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রতিভা কোনো সীমানা চেনে না।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *