বিখ্যাত সেলোবাদক শেকু কানেহ-মাসন, যিনি সঙ্গীতের জগতকে নতুন দিগন্ত দেখিয়েছেন, সম্প্রতি তার জীবন ও সঙ্গীতের পথচলার নানা দিক নিয়ে মুখ খুলেছেন। ব্রিটেনের এই তরুণ শিল্পী, যিনি রাজকীয় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন, আলোচনা করেছেন তার শিল্পীজীবন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সঙ্গীতের বিবর্তন নিয়ে।
শেকার সঙ্গীতজীবন শুরু হয়েছিল ছোটবেলাতেই। তিনি এবং তার ভাই-বোনরা ছিলেন সাত ভাই-বোনের মধ্যে সঙ্গীতচর্চায় সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ। তাদের পরিবারে সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা ছিল, যা তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিল। শেকু বলেন, “আমার বাবা-মা দুজনেই চেয়েছিলেন আমরা সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী হই।
তারা নিজেরাই ছোটবেলায় বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখেছিলেন। তাদের এই আগ্রহ থেকেই ধীরে ধীরে সবাই সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন।
শেকার সঙ্গীত প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বিবিসি ইয়ং মিউজিশিয়ান পুরস্কার জেতেন। এরপর ডিউক ও ডাচেস অফ সাসেক্সের বিবাহ অনুষ্ঠানে তার সঙ্গীত পরিবেশনা তাকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করে তোলে। তিনি বর্তমানে রয়েল একাডেমি অফ মিউজিকের ভিজিটিং প্রফেসর এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সেরা অর্কেস্ট্রা ও কন্ডাকটরের সাথে কাজ করছেন।
তবে সাফল্যের শিখরে আরোহণের পথে শেকুকে বর্ণবাদের শিকার হতে হয়েছে। বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে তিনি বিতর্কিত ‘রুল ব্রিটানিয়া!’ গানটি নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে চরম বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করা হয়। তিনি বলেন, “আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যে মানুষ কতটা আগ্রাসী হতে পারে।
এই ঘটনার পর তিনি সঙ্গীতের আশ্রয় খুঁজে পান। তিনি মনে করেন, সঙ্গীতের চর্চা এবং পরিবেশনা তাকে মানসিক শান্তির সন্ধান দেয়।
শেকার মতে, সঙ্গীত একটি পরিবর্তনশীল বিষয়। এটি সব সময়ই নতুন, তরল এবং চলমান। তিনি বলেন, “সংগীত আমার কাছে কখনোই স্থির নয়।
তিনি মনে করেন, সঙ্গীতের আসল সৌন্দর্য হলো এর ক্রমাগত পরিবর্তনশীলতা।
শেকু শুধু একজন শিল্পীই নন, তিনি সঙ্গীতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। তিনি মনে করেন, সঙ্গীত শিক্ষা সকলের কাছে সহজলভ্য হওয়া উচিত।
তিনি তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্মরণ করেন, যারা তাকে সঙ্গীতচর্চায় উৎসাহিত করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি শিশুদের জন্য একটি অর্কেস্ট্রা বিষয়ক বই লিখেছেন, যা নতুন প্রজন্মের কাছে সঙ্গীতের গুরুত্ব পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে।
শেকু কানেহ-মাসন তার নতুন অ্যালবাম ‘শস্তাকোভিচ অ্যান্ড ব্রিটেন’ নিয়েও কাজ করছেন। তার সঙ্গীত জীবনের এই পথচলা তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান