শিরোনাম: শিলাবৃষ্টির রহস্য উন্মোচন: আবহাওয়ার পরিবর্তন বুঝতে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় আকাশে জমাট বাঁধা বরফের টুকরোগুলো— শিলাবৃষ্টি নামে পরিচিত। এইসব শিলাবৃষ্টির কণা, ঝড় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে। আর তাই, উত্তর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজনেস ও হোম সেফটির ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ‘প্রজেক্ট আইসচিপ’ (ICECHIP) নামের একটি গবেষণা শুরু করেছেন।
এই প্রকল্পের অধীনে, বিজ্ঞানীরা শিলাবৃষ্টির কণা সংগ্রহ করছেন, তাদের আকার পরিমাপ করছেন, ওজন নিচ্ছেন, এবং তাদের শক্তি পরীক্ষা করার জন্য ভেঙে ফেলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে এই গবেষণা চালানো হচ্ছে। ঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টি সংগ্রহ করতে বিজ্ঞানীরা বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন। তাঁদের মধ্যে একটি হলো ‘সুপার মোবাইল হেইল অবজারভেটরি’ (SUMHO)।
এটি দেখতে অনেকটা একটি ফানেলের মতো, যা সরাসরি শিলাবৃষ্টি সংগ্রহ করে এবং সেগুলোকে দ্রুত ঠান্ডা করে। সংগৃহীত শিলাবৃষ্টির কণাগুলো পরে কলোরাডোতে অবস্থিত একটি বিশেষ ল্যাবে পাঠানো হয়।
সেখানে সেগুলোকে একটি গরম তারের করাত দিয়ে কেটে তাদের ভেতরের স্তরগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়, অনেকটা গাছের কাণ্ডের মতো। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টির দ্রুত বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে পারেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শিলাবৃষ্টির কণাগুলোর গঠন বিশ্লেষণ করে তারা এর ভেতরের বিভিন্ন উপাদান যেমন— ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক খুঁজে পেয়েছেন। এই উপাদানগুলো বাতাসের গুণমান সম্পর্কে ধারণা দিতে সহায়তা করে।
এছাড়াও, শিলাবৃষ্টির কণা কতটা শক্তিশালী, তা নির্ধারণ করতে বিজ্ঞানীরা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সেগুলোকে চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলেন। তাঁরা দেখেন, একটি শিলাবৃষ্টির কণা ভাঙতে কতটুকু শক্তির প্রয়োজন হয়।
গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে শিলাবৃষ্টির কণা আরও কঠিন হতে পারে। এর ফলে ঘরবাড়ির ছাদ এবং অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
এই গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী, নর্দার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর জেনসিনি বলেন, “শিলাবৃষ্টির কণাগুলো আসলে কী করছে, তা জানার চেষ্টা করছি আমরা।”
এই গবেষণার ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে। বিশেষ করে, ভবিষ্যতের ঝড়গুলো কেমন হবে, তা বুঝতে এই গবেষণা সহায়ক হবে।
যদিও বাংলাদেশে সরাসরি শিলাবৃষ্টির প্রভাব খুব বেশি নয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার আবহাওয়ার পরিবর্তনে এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস