পরিবেশ-বান্ধব শিশুর পণ্য: আপনার সন্তানের জন্য সেরা টেকসই বিকল্প!

পরিবেশ-বান্ধব শিশুর যত্নের সামগ্রী: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি আলোচনা

নবজাতকের আগমন প্রতিটি পরিবারে আনন্দ বয়ে আনে, কিন্তু একই সাথে আসে কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ। সন্তানের সুস্থতা ও ভালো থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা পরিবেশের কথা ভুলে যাই।

বাজারে উপলব্ধ অধিকাংশ বেবি প্রোডাক্ট (baby product) তৈরি হয় প্লাস্টিক বা অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদানে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আজকের আলোচনায় আমরা দেখব, কিভাবে পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে শিশুর যত্ন নেওয়া যায় এবং এক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

শিশুর জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর একটি জিনিস হল ডায়াপার বা ন্যাপি (diaper/nappy)। সাধারণত, একটি শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং (toilet training) দেওয়া পর্যন্ত ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ ডায়াপার ব্যবহার করতে হয়।

এগুলো তৈরি হয় প্লাস্টিক ও রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে এবং সহজে পরিবেশে মিশে না। ফলে, ডায়াপারগুলি বছরের পর বছর ধরে ডাস্টবিনে জমা হতে থাকে এবং পরিবেশ দূষণ ঘটায়।

তাহলে উপায়? এক্ষেত্রে কাপড়ের ডায়াপার (cloth diaper) একটি দারুণ বিকল্প হতে পারে। কাপড়ের ডায়াপারগুলো ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়, ফলে বর্জ্য হ্রাস হয়।

বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের ডায়াপার পাওয়া যায়, যেমন – ফ্ল্যানেল (flannel), বাঁশ বা সুতির কাপড়ের ডায়াপার। ব্যবহারের পর এগুলো সাবান ও গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়াও, বাংলাদেশে বর্তমানে কিছু পরিবেশ-বান্ধব ডায়াপার পাওয়া যায়, যেগুলি বায়োডিগ্রেডেবল (biodegradable) উপাদান দিয়ে তৈরি।

ডায়াপারের মতোই বেবি ওয়াইপস (baby wipes) ব্যবহারের পরিমাণও অনেক বেশি। সাধারণত, এই ওয়াইপসগুলো একবার ব্যবহারের পরেই ফেলে দেওয়া হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

এক্ষেত্রে, পুনঃব্যবহারযোগ্য ওয়াইপস (reusable wipes) একটি ভালো সমাধান। এগুলো নরম কাপড় দিয়ে তৈরি এবং পরিষ্কার করে বারবার ব্যবহার করা যায়।

শিশুর পোশাকের ক্ষেত্রেও পরিবেশ-বান্ধব উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। সিনথেটিক (synthetic) কাপড়ের বদলে সুতির পোশাক (cotton clothes) বেছে নেওয়া উচিত।

এছাড়াও, পুরনো পোশাক ব্যবহার করা বা বন্ধুদের থেকে ধার করা যেতে পারে। এতে নতুন পোশাক কেনার পরিমাণ কমে এবং বর্জ্য হ্রাস হয়।

খেলনার (toys) ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের খেলনার বদলে কাঠের বা প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি খেলনা বেছে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, শিশুর জন্য উপযুক্ত খেলনা তৈরি করার জন্য পুরনো কাপড় বা অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশুদের ব্যবহারের জন্য বাজারে অনেক ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়া যায়, যেমন – শ্যাম্পু (shampoo), লোশন (lotion) ইত্যাদি। এই পণ্যগুলো কেনার সময় নিশ্চিত করতে হবে যে সেগুলো ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদানমুক্ত।

সম্ভব হলে, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি পণ্য ব্যবহার করা উচিত।

পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং একটু চেষ্টা। আপনার ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

আসুন, সবাই মিলে আমাদের শিশুদের জন্য একটি সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ি।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *