গরম গাড়িতে একা: মায়ের মাদকাসক্তি, মেয়ের মৃত্যু!

দক্ষিণ ক্যারোলিনার এক মর্মান্তিক ঘটনায়, চরম অবহেলায় ১৩ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা পাংগালানগান নামের এক প্রতিবন্ধী কিশোরীর মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের গ্রীষ্মকালে, তার মা এবং মায়ের প্রেমিকের মাদকাসক্তি ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়।

ক্রিস্টিনার মা রিটা পাংগালানান এবং তার প্রেমিক ল্যারি কিং জুনিয়র, ক্রিস্টিনাকে একটি গাড়িতে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে একাই ফেলে রেখেছিলেন। গাড়ির ভেতরে তাপমাত্রা ১৩৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছে যাওয়ায় হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ক্রিস্টিনা।

ক্রিস্টিনা সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) রোগে আক্রান্ত ছিল এবং হুইলচেয়ার ব্যবহার করত। কথা বলতেও পারত না সে।

ঘটনার দিন, মা ও তার প্রেমিক ল্যারির বাড়িতেই ছিলেন, কিন্তু ক্রিস্টিনাকে গাড়ির ভেতরে রেখে তারা মাদক সেবন ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিলেন। তদন্তে জানা যায়, এই সময়কালে তারা কয়েক দিন ধরে মাদকাসক্তি চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

আদালতে প্রমাণ হয়, মা ও তার প্রেমিক ইচ্ছাকৃতভাবে ক্রিস্টিনাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন। ঘটনার দিন, তারা যখন জানতে পারেন গাড়ির চাবি নেই, তখন তাঁরা অন্য চাবির জন্য রিটার বাড়িতে যান।

ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যখন ক্রিস্টিনাকে গাড়ি থেকে বের করা হয়, ততক্ষণে তার নিথর দেহ। ফরেনসিক পরীক্ষায় জানা যায়, মৃত্যুর আগে বমি করার কারণে ফুসফুসে তরল প্রবেশ করে, যা তার চূড়ান্ত অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, আদালতের রায়ে রিটা পাংগালানানকে হত্যার দায়ে ৩৭ বছর এবং ল্যারি কিং জুনিয়রকে ৩২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, শিশুদের প্রতি শারীরিক নির্যাতনের জন্য তাদের আরও ২০ বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

বিচারক এই ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করে বলেন, “ক্রিস্টিনা চিৎকার করতে পারতো না, গাড়ির দরজা খোলারও ক্ষমতা ছিল না তার। অথচ, অভিযুক্তরা কয়েক ফুট দূরেই ছিল, যা সামান্য মনোযোগ দিলেই হয়তো মেয়েটির জীবন বাঁচানো যেত।”

আদালতে মায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ক্রিস্টিনার অন্য বোন এলিজাবেথ ক্লাইড জানান, তার মা ক্রিস্টিনাকে খুব ভালোবাসতেন। তবে, মামলার শুনানিতে জানা যায়, ঘটনার কয়েক দিন আগেও রিটা তার পরিচিত একজনকে ক্রিস্টিনার দেখাশোনার জন্য বলেছিলেন, কিন্তু তিনি কোনো খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিস দেননি।

রিটার প্রাক্তন রুমমেটও জানান, প্রায়ই তিনি ক্রিস্টিনার দেখাশোনার জন্য চাপ দিতেন।

এই ঘটনার জেরে, ক্রিস্টিনার পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হয়। পরে, উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়, যেখানে প্রায় ৩ লক্ষ ১৪ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা হয়।

বাংলাদেশি টাকায় (১ ডলার = ১১০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। এই ঘটনার পর, রিটাকে শিক্ষকতার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার শিক্ষকতার সনদও বাতিল করা হয়।

শিশুদের প্রতি অবহেলা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের সকলের সচেতন হওয়া উচিত। কোনো শিশুর প্রতি সন্দেহজনক কিছু দেখলে, দ্রুত কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *