বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতের আগমনী বার্তা বদলে যাচ্ছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে শীতের শুরু ক্রমশ দেরিতে হচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে এলার্জি এবং তুষারপাতের পরিমাণেও প্রভাব পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ শহরে শীতের প্রথম ঠান্ডা (হিমাঙ্ক বিন্দু, অর্থাৎ তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামা) আসার সময়টি গড়ে ১১ দিন পিছিয়ে গেছে। বিশেষ করে দেশটির মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই পরিবর্তন বেশি দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার রেনো শহরে শীতের প্রথম তুষারপাত এখন প্রায় ৪১ দিন দেরিতে হচ্ছে।
সাধারণত, শীতের শুরুতে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা শীতকালীন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু শীত দেরিতে আসায় এই প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে। এর ফলে এলার্জির মৌসুম দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং মশার উপদ্রবও বাড়ে।
এছাড়া, শীতকালীন ফল ও বাদাম উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিবর্তনের একটি বড় কারণ হলো বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু উষ্ণতা বৃদ্ধি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে শীতের সময়ে তুষারপাতের পরিমাণও কমছে। ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব অঞ্চলেই শীতকালে তুষারপাত কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের দেরিতে আগমনের কারণে জল সরবরাহ কমে যেতে পারে, বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে। শীতকালে বরফ কম পড়লে, সেই অঞ্চলের জলধারার ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়, যা ভবিষ্যতে পানির সংকট তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও, শীতের দেরিতে আগমন শীতকালীন বিনোদন এবং পর্যটনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশেও আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তন আসছে। বর্ষা মৌসুমের সময় পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি—এগুলো তারই প্রমাণ।
শীতের আগমন যদি দেরিতে হয়, তাহলে এর প্রভাব আমাদের কৃষি এবং জলসম্পদের ওপর পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শীতকালীন সবজির চাষাবাদে সমস্যা হতে পারে, যা খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হবে।
এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের নদ-নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যেতে পারে এবং লবণাক্ততা বাড়তে পারে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলবে।
সুতরাং, জলবায়ু পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানো, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন