যে শূকর বাঁচাতে পারে আপনার জীবন!

ভয়ঙ্কর কিডনি রোগের চিকিৎসার এক নতুন দিগন্ত।

বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, কিডনি রোগের ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব উদ্বেগের কারণ। প্রতি বছর, হাজার হাজার মানুষ কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। পর্যাপ্ত অঙ্গদাতার অভাবে অনেক রোগী সময় মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান না।

এই পরিস্থিতিতে, বিজ্ঞানীদের এক নতুন গবেষণা আশার আলো দেখাচ্ছে – যা হল, জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকর থেকে মানুষের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বায়োটেক কোম্পানি, eGenesis, এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। তারা শূকরের জিন পরিবর্তন করে এমনভাবে তৈরি করেছে, যা মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত। এই প্রক্রিয়ায় শূকরের কিডনিগুলি মানুষের শরীরের জন্য সহজে গ্রহণ যোগ্য করে তোলা হয়, যা প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি কমায়। কোম্পানিটি এই পদ্ধতির উন্নতির জন্য ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছে এবং তাদের উদ্ভাবন মানবজাতির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

এই গবেষণার অগ্রগতির পেছনে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেমন – জার্মানির বিজ্ঞানী বিওর্ন পিটারসন। তিনি শূকর থেকে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য eGenesis-এর হয়ে কাজ করছেন। এই কাজে CRISPR-Cas9 নামক জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত জিন সরিয়ে রোগমুক্ত করতে সহায়তা করে।

এই পদ্ধতির সাফল্যের প্রথম ধাপ হিসেবে, বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের মৃত রোগীদের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। এর ফল অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক ছিল। এরপর, জীবিত মানুষের শরীরে এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

প্রথম রোগী ছিলেন রিক স্লেম্যান, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। মার্চ ২০২৪-এ, বোস্টনের একটি হাসপাতালে তাঁর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। যদিও অস্ত্রোপচারের কয়েক মাস পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান, তবে প্রতিস্থাপিত কিডনিটি ভালোভাবেই কাজ করছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের কিডনি মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।

এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায়, আরও অনেক রোগী এই চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। টিম অ্যান্ড্রুস নামে একজন রোগী বর্তমানে সুস্থ জীবন যাপন করছেন, যিনি এই পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ভবিষ্যতে কিডনি রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

তবে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির উন্নতি করে চলেছেন, যাতে এটি আরও নির্ভরযোগ্য এবং সবার জন্য সহজলভ্য হয়। এই প্রযুক্তি সফল হলে, ভবিষ্যতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য মানব অঙ্গের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং কিডনি রোগের রোগীদের জন্য নতুন আশা জাগবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ বাড়াতে পারলে, রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *