আমেরিকার অর্থনীতিতে অশনি সংকেত! শুল্কের কোপে ধ্বংসের পথে ক্ষুদ্র ব্যবসায়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছোট ব্যবসার উপর ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। শুল্কের কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য এই খবরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ফলে দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কঠিন সময় পার করছেন। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, যা ব্যবসার টিকে থাকার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন।

উদাহরণস্বরূপ, ক্যাথরিন বার্ক নামের একজন উদ্যোক্তা নিজের আত্ম-যত্নের পণ্য তৈরি করেন। চীনের কারখানায় তার পণ্য তৈরি হয়। কিন্তু অতিরিক্ত শুল্কের কারণে তার উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। বার্ক জানান, তিনি তার ব্যবসা শুরু করার জন্য গত দুই বছর ধরে অনেক শ্রম দিয়েছেন। কিন্তু শুল্কের কারণে তার ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ছোট ব্যবসার মালিক মেলানি অ্যাব্রান্টিস জানান, তিনি তার কারুশিল্প বিষয়ক ব্যবসার জন্য জাপান ও পর্তুগাল থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম ও কাঁচামাল আমদানি করেন। কিন্তু শুল্কের কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার ব্যবসার লাভ কমে গেছে।

বেবি প্রোডাক্টস কোম্পানি ‘বিজি বেবি’র মালিক বেথ ফিনবো বেনিক জানান, তিনি ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ছিল, কিন্তু শুল্কের কারণে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি এখন ক্ষতির সম্মুখীন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই শুল্ক নীতির কারণে শুধু ছোট ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং এর নেতিবাচক প্রভাব পুরো মার্কিন অর্থনীতিতে পড়তে পারে। জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে, কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে এবং মন্দা দেখা দিতে পারে। ছোট ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ছোট ব্যবসার টিকে থাকা অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা কর্মসংস্থান তৈরি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যদি ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তা সামগ্রিক অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা শিক্ষা নিতে পারেন এবং তাদের ব্যবসার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক এবং বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন ব্যবসার উপর কেমন প্রভাব ফেলে, তা এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়।

ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার জন্য সরকারের সহায়তা ও নীতিনির্ধারণ জরুরি। এছাড়া, ব্যবসার খরচ কমানোর জন্য নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *