বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে, মানুষের জীবনযাত্রায়ও আসছে পরিবর্তন। সম্প্রতি, কেনিয়ার একজন উদ্যোক্তা এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন, যা শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করে তুলবে।
‘টের্প ৩৬০’ (Terp 360) নামের এই অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করেছেন এল্লি সাভাতিয়া। তাঁর এই উদ্ভাবনী চিন্তা ও কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্তৃক ‘আফ্রিকা প্রাইজ ফর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ৫০,০০০ পাউন্ড (প্রায় ৬৭,০০০ মার্কিন ডলার)।
টের্প ৩৬০ মূলত একটি ওয়েব-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে মানুষের কথাকে তাৎক্ষণিকভাবে সংকেত ভাষায় অনুবাদ করে।
এই অ্যাপ্লিকেশনটি ত্রিমাত্রিক (3D) অবতার ব্যবহার করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা ও বোঝার প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করে তোলে।
এল্লি সাভাতিয়ার মতে, এটি অনেকটা ‘গুগল ট্রান্সলেট’-এর মতো, যা কথা ও লিখিত ভাষাকে গ্রহণ করে এবং ছবিযুক্ত অবতারের মাধ্যমে সংকেত ভাষায় প্রকাশ করে।
কেনিয়ার শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষেরা প্রায়ই বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা পেতে সমস্যায় পড়েন, কারণ সেখানে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ জানা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা কর্মক্ষেত্রে তাঁদের নানান ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সাভাতিয়ার তৈরি এই অ্যাপ্লিকেশনটি সেই সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।
বর্তমানে, টের্প ৩৬০ ইংরেজি ও সোয়াহিলি ভাষা থেকে কেনিয়ার সংকেত ভাষায় অনুবাদ করতে পারে।
তবে নির্মাতারা খুব শীঘ্রই রুয়ান্ডান, উগান্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকান, ব্রিটিশ ও আমেরিকান সংকেত ভাষা যুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।
এই অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য, নির্মাতারা স্থানীয় এনজিও এবং সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডেটা সেট আছে এমন প্রকল্পের সাথে কাজ করছেন।
তাছাড়া, তাঁরা একটি মোশন ক্যাপচার স্টুডিও তৈরি করেছেন, যেখানে প্রতিদিন ১০০০ শব্দ রেকর্ড ও শেখার ক্ষমতা রয়েছে।
আফ্রিকার এই উদ্ভাবন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তবে, আমাদের বাংলাদেশেও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি।
বর্তমানে, বাংলাদেশে ঠিক কতজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী রয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই।
তবে তাঁদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শিক্ষা ও অনুবাদ পরিষেবা সহজলভ্য করা দরকার।
শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে তাঁদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারলে, তাঁরাও সমাজের মূল স্রোতে মিশে যেতে পারবেন।
এল্লি সাভাতিয়ার এই উদ্ভাবন, আমাদের সেই পথেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন