মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ চ্যাটে সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদানের কারণে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি, হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং সিআইএ প্রধান জন র্যাটক্লিফ-এর সিগন্যাল চ্যাটে পাঠানো দুটি টেক্সট মেসেজ এই উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
জানা গেছে, ওই চ্যাটটিতে সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে হুতি বিদ্রোহীদের উপর হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্যের বাইরে, ওয়াল্টজ এবং র্যাটক্লিফের বার্তাগুলোতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ছিল।
র্যাটক্লিফ তার একটি বার্তায় উল্লেখ করেন, সিআইএ হুতিদের উপর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, হামলার সময়সীমা পরিবর্তনের ফলে তারা হুতি নেতাদের উপর নজরদারির আরও ভালো সুযোগ পেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কার্যক্রমের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে হুতি বিদ্রোহীরা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে পারবে।
এছাড়াও, ওয়াল্টজ-এর একটি বার্তায় হামলার পরবর্তী বিস্তারিত তথ্য ছিল। তিনি জানান, সামরিক বাহিনী একজন শীর্ষস্থানীয় হুতি নেতার ‘পজিটিভ আইডি’ শনাক্ত করতে পেরেছে, যিনি তার বান্ধবীর বাড়িতে প্রবেশ করছিলেন। এর ফলে হুতিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি চিহ্নিত করা এবং তা এড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “হুতিদের গতিবিধি সব সময়ই কঠিন ছিল। এখন আপনি তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন যে, তারা আমাদের নজরদারির মধ্যে আছে।”
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ওয়াল্টজ এবং র্যাটক্লিফ, বারবার দাবি করেছেন যে, টেক্সট মেসেজগুলোতে কোনো গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদান করা হয়নি। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির শুনানিতে র্যাটক্লিফ তার আগের বার্তার কথা উল্লেখ করেন।
কিন্তু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। তাদের মতে, শুধু হেগসেথের বার্তাই নয়, র্যাটক্লিফ এবং ওয়াল্টজের বার্তায় এমন কিছু তথ্য ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন কৌশল সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এমনকি, বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ না করা হলেও, এটি ছিল এমন একটি বিষয় যা সাধারণত সরকার গোপন রাখে, যাতে শত্রুরা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে না পারে।
সিআইএ-এর অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাটক্লিফের সিগন্যাল অ্যাপ ব্যবহারের ধরন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, “আমার মনে হয়, এই অ্যাপ ব্যবহারের কারণে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হবে।”
আরেকজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা র্যাটক্লিফকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “তিনি পরিচালক। তার আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।”
সিআইএ মুখপাত্র সিএনএনকে জানান, “পরিচালক র্যাটক্লিফ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। চ্যাটে তিনি যা বলেছেন, তাতে কোনো সোর্স বা পদ্ধতির ঝুঁকির সম্ভাবনা ছিল না। একমাত্র ক্ষতি হয়েছে হুতি সন্ত্রাসীদের, যাদের নির্মূল করা হয়েছে।”
এদিকে, সিগন্যাল ব্যবহারের বিষয়ে সিআইএ-এর কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সিগন্যাল একটি অনিরাপদ প্ল্যাটফর্ম। এই ধরনের সংবেদনশীল আলোচনার জন্য এটি উপযুক্ত নয়। যদিও এই অ্যাপটি ব্যবহার করা বৈধ এবং মিটিং বা অফিসের সময়সূচী জানানোর মতো সাধারণ কাজে এটি বেশ জনপ্রিয়।
কিন্তু, যেকোনো মেসেজিং অ্যাপের মতোই, সিগন্যালেও হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকে। গত মাসে, গুগল মালিকানাধীন নিরাপত্তা সংস্থা ম্যান্ডিয়েন্ট জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু হ্যাকার ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সিগন্যাল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল।
এই ঘটনার পর, সিআইএ-তে অপারেশনাল বিষয়ে সিগন্যাল ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাও সতর্ক করেছে যে, সিগন্যাল সম্পূর্ণ নিরাপদ নয় এবং এটি গোপনীয় তথ্য আদান-প্রদানের জন্য উপযুক্ত নয়।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া এখনো পর্যন্ত সেভাবে দেখা যায়নি। সিআইএ এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য তদন্ত শুরু করেনি। এমনকি, প্রতিরক্ষা বিভাগও তাদের নিরাপত্তা নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনেনি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন