সিগন্যাল চ্যাট বিতর্ক: ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বার্তা সংরক্ষণে বিচারকের কড়া নির্দেশ!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি সিগন্যাল চ্যাট গ্রুপের বার্তা সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির একজন ফেডারেল বিচারক। এই গ্রুপ চ্যাটে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছিল, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে একজন সাংবাদিকের কাছে চলে যায়।

এই ঘটনার জেরে স্বচ্ছতা ও সরকারি নথিপত্র সংরক্ষণে ঘাটতির অভিযোগ উঠেছে।

ওয়াশিংটনের ফেডারেল বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, কোষাধ্যক্ষ স্কট বেসেন্ট, সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ এবং জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসি গাবার্ডকে ১১ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে হওয়া তাঁদের সব বার্তা সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন।

বোয়াসবার্গ স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হলো, সিগন্যাল চ্যাট থেকে কোনো বার্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা। কারণ, নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তাগুলো মুছে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো ভুল খুঁজে পাননি।

জানা গেছে, হোয়াইট হাউজ এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সিগন্যাল অ্যাপে আদান-প্রদান করা সব বার্তা সংরক্ষণের জন্য একটি নতুন ‘নথি সংরক্ষণ নীতি’ তৈরি করতে বলেছে।

এই সিগন্যাল চ্যাট গ্রুপে হওয়া আলোচনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ। তাদের আশঙ্কা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে যেতে পারে।

মূলত, সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনার সময় সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ অনিচ্ছাকৃতভাবে ‘দ্য আটলান্টিক’ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে এই চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেন।

অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে হেগসেথের পাঠানো বার্তায় ইয়েমেনে হাউছি বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের বিস্তারিত তথ্য ছিল। এতে যুদ্ধ বিমানের উড্ডয়ন সময়, প্রথম বোমা নিক্ষেপের সময় এবং নৌবাহিনীর টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।

ওয়াল্টজ রিয়েল টাইম আপডেটও শেয়ার করেছিলেন।

এই ঘটনায় আমেরিকান ওভারসাইট নামের একটি স্বচ্ছতা বিষয়ক সংস্থা মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, সিগন্যাল চ্যাটে থাকা কর্মকর্তারা ফেডারেল রেকর্ড আইন লঙ্ঘন করেছেন। এই আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের যোগাযোগের বিষয়গুলো সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।

বিচারক বোয়াসবার্গ পরে সিদ্ধান্ত নেবেন যে, সিগন্যাল চ্যাটের বার্তা মুছে যাওয়ার ফিচার ফেডারেল রেকর্ড সংরক্ষণের আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা।

আমেরিকান ওভারসাইট অভিযোগ করেছে, সিগন্যাল চ্যাটের আলোচনা নীতি সংক্রান্ত বিষয় ছিল, যা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

আদালতে শুনানিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ইতিমধ্যেই তাদের কাছে থাকা তথ্য সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, প্রতিটি সংস্থা আলাদাভাবে কী সংরক্ষণ করেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াল্টজের শেয়ার করা তথ্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ওয়াল্টজের বার্তা প্রকাশ্যে আসায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *