৮৯% মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনে পদক্ষেপ চায়, নীরবতা ভাঙতে হবে!

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ মানুষ। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৮৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তাদের সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি কিছু করুক।

কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে তারা সংখ্যালঘু, যা সম্ভবত তাদের মধ্যে এক ধরনের নীরবতা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠতা’র কথা মানুষকে জানাতে পারলে জলবায়ু রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নেওয়া সহজ হবে।

১২৫টি দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের ওপর চালানো এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ মনে করেন, তাদের দেশের সরকারের উচিত বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে আরও বেশি কিছু করা।

একইসঙ্গে, তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রতি মাসে তাদের আয়ের ১ শতাংশ দিতে রাজি কিনা। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় সব দেশের মানুষই ধারণা করেছিলেন, তাদের দেশের খুব কম সংখ্যক মানুষ এই প্রস্তাবে রাজি হবেন।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এর উল্টো চিত্র। বেশিরভাগ দেশেই অর্ধেকের বেশি মানুষ এই ১ শতাংশ অর্থ দিতে রাজি।

গড়ে, ৬৯ শতাংশ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অর্থ দিতে রাজি ছিলেন। অথচ, তারা ধারণা করেছিলেন, মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ এই বিষয়ে আগ্রহী।

গ্রিস থেকে গ্যাবন পর্যন্ত কিছু দেশে, এই ধারণাগত এবং বাস্তবতার মধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পার্থক্য দেখা গেছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোতেও জলবায়ু রক্ষার পক্ষে জনসমর্থন বেশ জোরালো। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের ৭৭ শতাংশের জন্য দায়ী।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অন্যদের সমর্থন আছে—এই কথাটি মানুষকে জানানো জলবায়ু সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্টনি লেইজারোভিটজ

বর্তমানে, জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্বেগ মানুষ নিজের মনেই লালন করে। আমরা এক ধরনের নীরবতার চক্রে আটকা পড়ে আছি।”,

যুক্তরাষ্ট্রের ওবারলিন কলেজের অধ্যাপক সিনথিয়া ফ্রাঞ্জ

যুক্তরাজ্যের ক্লাইমেট ব্যারোমিটার গবেষণা দলের ড. নাইল ম্যাকলফলিন মনে করেন, “যদি আমরা এই ধারণাগত ফাঁকগুলো দূর করতে পারি, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।”

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। এমনকি ধনী দেশগুলোর নাগরিকরা দরিদ্র ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সমর্থন জানাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের দীর্ঘদিনের অপপ্রচার এই ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠতা’র মূল কারণ।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে একটি ঐক্যমত রয়েছে। আমাদের ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে, এই ভুল ধারণাগুলো দূর করতে পারলে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।”

জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তেওডোরা বোনেভা, যিনি এই জরিপ দলের অংশ ছিলেন

জরিপে অন্তর্ভুক্ত ১২৫টি দেশ বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ৯৬ শতাংশের জন্য দায়ী। চীনের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, যেখানে ৯৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তাদের সরকারের আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের আয়ের ১ শতাংশ দিতে রাজি।

ব্রাজিল, পর্তুগাল এবং শ্রীলঙ্কার মানুষও এই বিষয়ে বেশ সচেতন।

অন্যদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল কিছুটা নিচে। সেখানেও ৭৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তাদের সরকারের আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, এবং ৪৮ শতাংশ মানুষ অর্থ দিতে রাজি।

নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে এবং রাশিয়ার মানুষও এই বিষয়ে তুলনামূলকভাবে কম সমর্থন দেখিয়েছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যেও এই বিষয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের এমপিরা বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে জনসাধারণের সমর্থনকে অনেক কম মূল্যায়ন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে, কংগ্রেসের কর্মীরা কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে মানুষের সমর্থনকে প্রায়ই ৫০ শতাংশের বেশি কমিয়ে দেখেছেন।

মানুষ গভীর ভাবে উপলব্ধি করে যে আমরা জলবায়ু সংকটের মধ্যে আছি। তারা চায় বিশ্ব নেতারা সাহসী হোক, কারণ তারা প্রতিদিন এর প্রভাব অনুভব করছে। বিশ্ব নেতাদের এই তথ্যকে একটি জোরালো আহ্বান হিসেবে দেখা উচিত, যা তাদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও সক্রিয় করবে।”

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ক্যাসিয়া ফ্লিন

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *