বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের মুকুট আবারও সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের। স্কাইট্র্যাক্স নামক বিমান পরিবহন রেটিং সংস্থা ২০২৩ সালের জন্য এই খেতাবটি দিয়েছে। এই নিয়ে ১৩ বারের মতো ‘বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর’ নির্বাচিত হলো চাঙ্গি।
বিমানবন্দরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, উন্নত পরিষেবা এবং নান্দনিকতার কারণে এটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর শুধু একটি গন্তব্য নয়, এটি যেন এক অত্যাশ্চর্য জগৎ। এখানে আগত যাত্রীদের জন্য রয়েছে ভ্রমণের চমৎকার অভিজ্ঞতা।
বিমানবন্দরের ভেতরে রয়েছে বিশাল জুয়েল শপিং মল, যেখানে কেনাকাটার জন্য সবসময় ভিড় লেগে থাকে। এছাড়াও, রয়েছে নানা ধরনের ইনডোর গার্ডেন এবং ৪০ মিটার উঁচু রেইন ভর্টেক্স, যা বিশ্বের বৃহত্তম ইনডোর জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত।
যাত্রীদের জন্য এখানে স্পা, হোটেল, আর্ট প্রদর্শনী, সিনেমা এবং ডাইনোসরের থিম পার্কের মতো নানা আকর্ষণ বিদ্যমান। এমনকি ফ্লাইট ছাড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত যাত্রীরা তাদের লাগেজ জমা দিতে পারেন, যা ভ্রমণকারীদের জন্য বেশ সুবিধাজনক।
শুধু যাত্রী পরিষেবাতেই নয়, খাদ্যরসিকদের জন্যও চাঙ্গি বিমানবন্দর একটি অসাধারণ স্থান। এখানে রয়েছে বিশ্বমানের খাবারের ব্যবস্থা।
সম্প্রতি, মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এয়ারপোর্ট অ্যাওয়ার্ডসে, চাঙ্গি “বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের ডাইনিং” এবং “এশিয়ার সেরা বিমানবন্দর”-এর পুরস্কার জিতেছে। পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও এই বিমানবন্দরটি অনন্য, যা “বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের ওয়াশরুম” পুরস্কারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
ভবিষ্যতে যাত্রীসেবার মান আরও উন্নত করতে এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে চাঙ্গি বিমানবন্দর ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। নতুন টার্মিনাল ৫ নির্মাণের কাজও চলছে, যা ২০৩০-এর দশকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
এশিয়ার অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোও তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। স্কাইট্র্যাক্সের সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
এই বিমানবন্দরটি “সেরা শপিং বিমানবন্দর” এবং “মধ্যপ্রাচ্যের সেরা বিমানবন্দর”-এর পুরস্কারও জিতেছে।
তালিকায় তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর (যা বিশ্বের পরিচ্ছন্নতম বিমানবন্দর হিসেবেও পরিচিত), সিউলের ইনচিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর কর্মীদের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত), নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টোকিও), এবং হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
ইউরোপের বিমানবন্দরের মধ্যে প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দর টানা তৃতীয়বারের মতো “ইউরোপের সেরা বিমানবন্দর” নির্বাচিত হয়েছে।
এছাড়া, রোমের ফিউমিসিনো, মিউনিখ, জুরিখ এবং হেলসিঙ্কি-ভান্তা বিমানবন্দরের নামও শীর্ষ তালিকায় রয়েছে।
ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর “বিশ্বের সবচেয়ে পরিবার-বান্ধব বিমানবন্দর” হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, উত্তর আমেরিকার একমাত্র বিমানবন্দর হিসেবে শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ভ্যাঙ্কুভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আফ্রিকার সেরা বিমানবন্দরের স্বীকৃতি পেয়েছে কেপ টাউন বিমানবন্দর।
২০২৩ সালের সেরা বিমানবন্দরের সম্পূর্ণ তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- সিঙ্গাপুর চাঙ্গি বিমানবন্দর
- হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- টোকিও হানেদা বিমানবন্দর
- ইনচিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- প্যারিস চার্লস ডি গল বিমানবন্দর
- রোম ফিউমিসিনো বিমানবন্দর
- মিউনিখ বিমানবন্দর
- জুরিখ বিমানবন্দর
- দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- হেলসিঙ্কি-ভান্তা বিমানবন্দর
- ভ্যাঙ্কুভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর
- ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- মেলবোর্ন বিমানবন্দর
- চুবু সেন্ট্রেইর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- কোপেনহেগেন বিমানবন্দর
- আমস্টারডাম শিপোল বিমানবন্দর
- বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
এই বছর তাইওয়ানের তাউইউয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর “বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর ব্যাগেজ ডেলিভারি” এবং হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর “বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন” পুরস্কার জিতেছে।
কোপেনহেগেন বিমানবন্দর “বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর নিরাপত্তা প্রক্রিয়াকরণ”-এর জন্য পুরস্কৃত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: স্কাইট্র্যাক্স