দয়া ও ভালোবাসার পৃথিবী গড়তে শিশুদের মানুষ করা: কিছু জরুরি পরামর্শ।
আজকের অস্থির পৃথিবীতে, শিশুদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাটা অনেক অভিভাবকের কাছেই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। চারপাশে যখন হিংসা, ভুল তথ্য আর অসহিষ্ণুতা, তখন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে দয়া ও সহানুভূতির বীজ বপন করাটা অত্যন্ত জরুরি।
বিজ্ঞানীরাও বলছেন, সহানুভূতিশীল শিশুরা অন্যদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে এবং তাদের ভালো বন্ধু ও পরিবার থাকার সম্ভাবনা বেশি। এমনকি, যারা ভালোভাবে মিশতে পারে, বিদ্যালয়েও তারা ভালো ফল করে।
শিশুদের মধ্যে দয়ার গুণাবলী তৈরি করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:
১. অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন:
শিশুরা বড়দের আচরণ অনুসরণ করে। তাই, তাদের সামনে দয়া ও ভালোবাসার উদাহরণ তৈরি করাটা খুব জরুরি।
তাদের সঙ্গে খেলাধুলা, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বাস্তব জীবনে অন্যদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আপনি এই গুণাবলী শেখাতে পারেন।
কোনো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, খাবার ভাগ করে খাওয়া, এমনকি অন্যের জন্য দরজা খুলে দেওয়া—এগুলোও শিশুদের কাছে দয়ার উদাহরণ হিসেবে কাজ করে।
২. “অনুগ্রহ” এবং “ধন্যবাদ”-এর গুরুত্ব:
ছোট ছোট শব্দগুলো, যেমন “অনুগ্রহ” এবং “ধন্যবাদ”, শিশুদের মধ্যে দয়ার ভিত্তি স্থাপন করে। এগুলো তাদের অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।
৩. আলোচনা চালিয়ে যান:
শিশুদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের বিদ্যালয়ে বা খেলার মাঠে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
কোনো বন্ধু খারাপ ব্যবহার করলে, তাদের মনে কী চলছে, তা জানার চেষ্টা করুন।
সম্ভবত, সে কোনো দুঃখ বা কষ্টের মধ্যে আছে, অথবা তার কোনো বন্ধু নেই। আলোচনা করলে শিশুরা বুঝতে পারবে যে, দয়া দেখানো একটি সচেতন সিদ্ধান্ত।
৪. প্রশংসা করুন:
শিশুদের ভালো কাজের জন্য তাদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন। তাদের কাজের ফল নয়, বরং তারা যে চেষ্টা করেছে, তার প্রশংসা করুন।
যেমন, “তুমি যখন তোমার বোনকে সাহায্য করেছিলে, তখন এটা খুবই ভালো কাজ ছিল।”
৫. তাদের অনুভূতিকে সম্মান করুন:
ছোট শিশুরা অনেক সময় তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না।
কোনো খারাপ ঘটনা ঘটলে, তাদের ভয় পাওয়া বা হতাশ হওয়াটা স্বাভাবিক।
তাদের ভয়ের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখান।
তাদের বোঝান যে, খারাপ সময়েও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
৬. আত্ম-দয়ার শিক্ষা দিন:
শিশুদের শেখান, সবারই ভালো এবং খারাপ দিক থাকে।
নিজের প্রতি দয়া ও সহানুভূতির ধারণা তৈরি করতে তাদের সাহায্য করুন।
“খারাপ বন্ধু” এবং “ধৈর্যশীল বন্ধু”-র ধারণা দিয়ে খেলা তৈরি করা যেতে পারে।
এর মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবে, তাদের মনের ভেতরেই এই দুটি চরিত্র বাস করে এবং তারা কাকে বেশি গুরুত্ব দেবে, সেই সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদের।
৭. বই ও খেলার ব্যবহার:
শিশুদের বই পড়ে শোনানো এবং খেলার মাধ্যমে তাদের মধ্যে সহানুভূতি তৈরি করা যায়।
বইয়ের চরিত্রদের অনুভূতি নিয়ে আলোচনা করুন এবং তাদের জীবনের সঙ্গে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
খেলাধুলা তাদের মধ্যে সহযোগিতা, ভাগাভাগি এবং জেতার আনন্দ উপভোগ করতে শেখায়।
৮. বন্ধুত্বের গুরুত্ব:
বন্ধুত্ব শিশুদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে তাদের উৎসাহিত করুন।
তাদের বন্ধুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখান।
৯. দয়া ছড়ানোর উপায়:
দয়া একটি সংক্রামক বিষয়।
যখন আমরা কারও প্রতি দয়া দেখাই, তখন সেই ব্যক্তিও অন্যদের প্রতি দয়া দেখানোর জন্য উৎসাহিত হয়।
১০. অতিরিক্ত কিছু বিষয়:
- শিশুদের সবসময় তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে উৎসাহিত করুন।
- তাদের অন্যদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে শেখান।
- তাদের ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করুন।
- তাদের মধ্যে আত্ম-সম্মান তৈরি করুন।
- যদি সম্ভব হয়, একটি পোষা কুকুর তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিন।
এসব উপায় অবলম্বন করে, আপনি আপনার শিশুদের মধ্যে দয়া ও ভালোবাসার বীজ বপন করতে পারেন।
তাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, আপনার এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian