ত্বকের বয়স বাড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু কিছু সহজ উপায়ে এর গতি কমানো যেতে পারে। বিশেষ করে, অকালে চামড়ার ভাঁজ বা বলিরেখা প্রতিরোধের জন্য কিছু বিষয় জানা দরকার।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সাধারণত, বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, ফলে চামড়ায় ভাঁজ পড়তে শুরু করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, দূষণ এবং ধূমপানের মতো কিছু অভ্যাস এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।
তবে, সঠিক যত্ন নিলে এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
আসুন, জেনে নিই বলিরেখা প্রতিরোধের কিছু কার্যকরী উপায়:
১. **রোদ থেকে ত্বককে বাঁচান:** সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে এবং বলিরেখা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
তাই, প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার আগে কমপক্ষে ৩০ এসপিএফ (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি, কারণ সূর্যের রশ্মি মেঘ ভেদ করে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
সানগ্লাস এবং লম্বা হাতা যুক্ত পোশাক ব্যবহার করেও ত্বককে রক্ষা করতে পারেন।
২. **রেটিনয়েড ব্যবহার করুন:** ভিটামিন এ থেকে তৈরি রেটিনয়েড, যেমন – রেটিনল, ত্বককে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে এবং কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। কোলাজেন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়ক।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের রেটিনয়েড পাওয়া যায়, যার মধ্যে কিছু ঔষধপত্র ছাড়াই ব্যবহার করা যায়, আবার কিছু ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
৩. **ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখুন:** ময়েশ্চারাইজার বা ত্বক ময়েশ্চারাইজ করার ক্রিম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা বলিরেখা কমাতে সহায়ক।
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড (hyaluronic acid) এবং গ্লিসারিন (glycerin) যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার সম্পর্কে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
৪. **পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন:** পর্যাপ্ত জল পান করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। এটি ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা উচিত।
৫. **স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন:** স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন – ফল ও সবজি, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং বলিরেখা কমাতে সহায়ক।
তাজা ফল ও সবজির মধ্যে আম, পেঁপে, পেয়ারা, এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি গ্রহণ করা ভালো। খাবারের তালিকায় হলুদ ও অন্যান্য মশলার ব্যবহার করুন, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
৬. **ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তন করুন:** ঘুমের ভঙ্গিও ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। উপুড় হয়ে বা একপাশে কাত হয়ে ঘুমালে ত্বকে চাপ পড়ে, যা বলিরেখা সৃষ্টি করতে পারে।
চিৎ হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করলে ত্বকের ঘর্ষণ কম হয়।
৭. **ধূমপান পরিহার করুন:** ধূমপান ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ধূমপান ত্যাগ করলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করা যায়।
৮. **মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন:** অতিরিক্ত মানসিক চাপ ত্বকের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। যোগা, ধ্যান, অথবা পছন্দের শখের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যেতে পারে।
ত্বকের যত্ন নেওয়া একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
নিয়মিত ত্বকের যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা আপনাকে দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। কোনো বিষয়ে দ্বিধা থাকলে বা ত্বকের সমস্যা হলে অবশ্যই একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: Healthline