ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা—চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (Obstructive Sleep Apnea বা OSA)। এই সমস্যায় ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন, এবং উদ্বেগের বিষয় হল, তাঁদের একটা বড় অংশ—বিশেষ করে বাংলাদেশে—বিষয়টি সম্পর্কে জানেনই না।
সাধারণত, স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সিপ্যাপ (CPAP) মেশিন। এই যন্ত্রটি ঘুমের সময় শ্বাসনালী খোলা রাখতে সাহায্য করে।
তবে, সিপ্যাপ মেশিনের ব্যবহার অনেকের কাছেই বেশ কঠিন মনে হয়। ঘুমের সময় মুখে মাস্ক পরে থাকা, অথবা মেশিনের আওয়াজ—এসব কারণে অনেকে এটি ব্যবহার করতে চান না।
ফলস্বরূপ, এই চিকিৎসার সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ঘুমের সমস্যা হলে তা দ্রুত শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা করানো জরুরি। অবহেলিত অবস্থায় এটি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিসের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
সম্প্রতি, স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাইওয়ানের একটি কোম্পানি, সোমনিক্স হেলথ (Somnics Health), তৈরি করেছে আইন্যাপ (iNAP) নামক একটি ডিভাইস।
এটি সিপ্যাপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। আইন্যাপ মূলত একটি ছোট, ব্যাটারিচালিত যন্ত্র, যা মুখের ভেতরে পরে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
এটি সিপ্যাপের মতো বাতাস সরবরাহ না করে বরং মুখের ভেতরের নরম টিস্যুগুলিকে সামান্য টেনে ধরে শ্বাসনালীকে খোলা রাখে।
আইন্যাপ ব্যবহারের সুবিধা হল, এটি আকারে ছোট এবং বহনযোগ্য। একবার চার্জ দিলে এটি টানা পাঁচ রাত পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রস্তুতকারক কোম্পানির দাবি, এটি ঘুমের সময় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ আরামদায়ক।
বর্তমানে, এটি এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকাতে পাওয়া যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (US FDA) আইন্যাপ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে, তবে এটি সিপ্যাপের মতো কার্যকর কিনা, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এখনো কিছু দ্বিধা রয়েছে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আইন্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত উন্নতি হয়েছে, যেখানে সিপ্যাপের কার্যকারিতা প্রায় ৯৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন্যাপ সিপ্যাপের বিকল্প হতে পারে, তবে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করতে আরও বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।
বর্তমানে, আইন্যাপ যুক্তরাষ্ট্রে সাবস্ক্রিপশন মডেলের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে, যার মাসিক কিস্তি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪০,০০০ টাকার মতো।
যদিও এটি স্বাস্থ্য বীমার আওতায় এখনো আসেনি, তবে কোম্পানিটি এটিকে বীমার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশেও ঘুমের সমস্যা এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
ঘুমের সমস্যা শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার জন্য এখানে আরও উন্নত সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন।
ভবিষ্যতে, আইন্যাপের মতো নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো যদি সহজলভ্য হয়, তবে তা ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিঃসন্দেহে সহায়ক হবে।
তবে, কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন