ঘুমের অভাব: মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রতিকার
ঘুম কম হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাজের শেষে ক্লান্ত লাগা বা দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব – এগুলো হয়তো ঘুমের অভাবের প্রাথমিক লক্ষণ।
আমেরিকান একাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিনের নতুন গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আমাদের আজকের আলোচনা ঘুমের অভাব, এর কারণ, এবং এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি। যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা বা মানসিক অবসাদ-এর সমস্যাও বেশি দেখা যায়।
আমাদের দেশে অনেকেই ঘুমের অভাবকে গুরুত্ব দেন না। মিটিংয়ে ঘুমিয়ে পড়া বা দিনের বেলা সামান্য তন্দ্রা আসা – এমন বিষয়গুলোকে হয়তো তেমন একটা পাত্তা দেওয়া হয় না।
কিন্তু এটা আসলে উদ্বেগের বিষয়। কারণ, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়। মনোযোগের অভাব হয়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে আসে, এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়।
ঘুমের অভাবে সবচেয়ে মারাত্মক বিপদ হলো ‘মাইক্রোস্লিপস’ বা চোখের পলকে ঘুমিয়ে যাওয়া। অল্প সময়ের জন্য, হয়তো ২-৩ সেকেন্ডের জন্য, ঘুম চলে আসে, যা অনেক সময় বুঝতেই পারা যায় না।
গাড়ি চালানোর সময় এমনটা হলে তা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানো, বিশেষ করে রাতের বেলা, একটি সাধারণ ঘটনা।
তাই চালকদের পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এছাড়া, নির্মাণ শ্রমিক বা ভারী যন্ত্র ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও ঘুমের অভাব মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ঘুমের অভাব মাপার একটি উপায় হলো ‘এপওয়ার্থ স্লিপিনেস স্কেল’ ব্যবহার করা। এই পদ্ধতিতে দিনের বেলা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঘুম আসার সম্ভাবনা কতটুকু, তা বিবেচনা করা হয়।
যেমন, দুপুরের খাবার পর চুপ করে বসে থাকলে ঘুম আসে কিনা, বা টিভিতে কোনো অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েন কিনা – এমন কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে ঘুমের অভাব পরিমাপ করা হয়। এই স্কেলে যদি ১০-এর বেশি স্কোর হয়, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
ঘুমের অভাবের আরও কিছু লক্ষণ হলো – চোখের পাতা ভারী হয়ে আসা, শরীর এলিয়ে পড়া, মাথা ঘোরা, এমনকি হাত কাঁপা। এছাড়া, মানুষ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে এবং হুটহাট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ঘুমের অভাবের কারণগুলো বিভিন্ন। ঘুমের সমস্যা, যেমন – স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হওয়া, ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা, এবং সার্কেডিয়ান রিদম ডিসঅর্ডার-এর কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘ
টতে পারে।
এছাড়া, কিছু ওষুধ এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাসও ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন – অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা, রাতে মদ্যপান করা, ঘুমের আগে ধূমপান বা মাদক সেবন করা ঘুমের জন্য ক্ষতিকর।
ঘুমের ভালো অভ্যাসের অভাবেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
অনেকে মনে করেন, ঘুমের জন্য অ্যালকোহল বা ঘুমের ওষুধ ভালো। কিন্তু এগুলো ঘুমের গুণগত মান কমিয়ে দেয়।
রাতে মদ্যপান করলে ঘুম গভীর হয় না, বরং ঘুম ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই ঘুমের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জরুরি।
ঘুমের অভাব কমাতে হলে কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। ঘুমের আগে ক্যাফিন ও অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম শেষ করুন। ঘুমানোর জন্য শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। রাতে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘুমের অভাব হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন