ঘুমিয়ে ওজন কমানো: পর্যাপ্ত বিশ্রাম কীভাবে সাহায্য করতে পারে।
ওজন কমানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করার জন্য ঘুম যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে বিষয়ে অনেকেই হয়তো অবগত নন। সুস্থ থাকতে হলে খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ঘুমের অভাবে শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে কীভাবে ওজন কমানো যেতে পারে:
ঘুম কম হলে শরীরে কি কি সমস্যা হয়?
আমাদের দেশে অনেকেই পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হন। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) এর মতে, প্রায় ৩৯% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রাতে ৭ ঘণ্টার কম ঘুমায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে, যার মধ্যে ওজন বৃদ্ধি অন্যতম।
১. ঘুমের অভাব এবং ওজন বৃদ্ধি:
যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না, তাদের বডি মাস ইনডেক্স (BMI) বেশি হওয়ার সম্ভবনা থাকে এবং ওজনও বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ৭ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি প্রায় ৪১% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে ‘ঘ্রেলিন’ নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ক্ষুধা বাড়ায়। অন্যদিকে, ‘লেপটিন’ নামক হরমোনের মাত্রা কমে যায়, ফলে পেট ভরা থাকার অনুভূতি কম হয়।
এছাড়াও, ঘুমের অভাব শরীরের অন্যান্য হরমোনের উপরও প্রভাব ফেলে, যা শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমাতে সাহায্য করে।
২. ঘুমের অভাব এবং খাদ্যাভ্যাস:
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ঘুম কম হলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়, ফলে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।
ঘুম কম হলে শরীরে ক্ষুধার অনুভূতি বাড়ে, যার কারণে মানুষ বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঘুম কমায় তারা প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করে।
৩. ঘুমের অভাব এবং রাতে খাওয়ার প্রবণতা:
দেরিতে ঘুমালে রাতে খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সাধারণত রাতের খাবার খাওয়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার মধ্যে দীর্ঘ সময় থাকলে ক্ষুধা লাগতে পারে।
গভীর রাতে খাওয়ার কারণে ওজন বাড়তে পারে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে। যারা রাতের বেলা দেরিতে খাবার খান, তাদের ঘুমের গুণগত মানও কমে যেতে পারে।
৪. ঘুমের অভাব এবং বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা:
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়াকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে। ঘুম কম হলে শরীরে মেটাবলিক সিনড্রোম-এর ঝুঁকি বাড়ে, যা হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ফ্যাট অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৫. ঘুমের অভাব এবং শারীরিক কার্যকলাপ:
ঘুম ও শারীরিক কার্যকলাপ একে অপরের সাথে জড়িত। ঘুমের অভাব শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দেয়।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়, ফলে ব্যায়াম করার আগ্রহ কমে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ব্যায়ামের সময় ক্যালোরি কম খরচ হয়, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে।
এছাড়াও, ঘুমের অভাবে খেলাধুলা বা ব্যায়ামের সময় আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
ওজন কমাতে ঘুমের গুরুত্ব:
ওজন কমাতে চাইলে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুমের অভাব স্বাস্থ্যকর খাবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে, ক্ষুধা বাড়ায় এবং শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দেয়, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক।
করণীয়:
ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের অভাব হলে তা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করুন।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বা টিভি দেখার পরিবর্তে বই পড়া অথবা অন্য কোনো আরামদায়ক কাজ করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
সতর্কতা:
যদি আপনার ওজন কমানোর চেষ্টা সফল না হয়, তবে ঘুমের অভ্যাস পরীক্ষা করা দরকার। ঘুমের সমস্যা হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন