ভবিষ্যতের প্রযুক্তি: স্মার্ট চশমা কি স্মার্টফোনের জায়গা নেবে?
প্রযুক্তি বিশ্ব এখন নতুন দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছে – স্মার্ট চশমা। গুগল, মেটা এবং স্ন্যাপের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা মনে করছে, এই প্রযুক্তিই হতে যাচ্ছে পরবর্তী বড় উদ্ভাবন। এক দশক আগে গুগল গ্লাস বাজারে এলেও, সেই সময়ে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং ব্যবহারকারীদের আগ্রহের অভাবে তা তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
তবে এখন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence – AI) উন্নতির ফলে স্মার্ট চশমা আরও কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আসলে স্মার্ট চশমা হলো এমন এক ধরণের চশমা যা আপনার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে জানতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনো দোকানে যান এবং কোনো পণ্যের দিকে তাকান, তাহলে এই চশমা সেই পণ্য সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবে, এমনকি রেসিপিও সরবরাহ করতে পারবে। মেটার (Meta) তৈরি করা রে-বান (Ray-Ban) এআই (AI) চশমা ব্যবহার করে, ব্যবহারকারীরা দোকানে থাকা কোনো একটি মরিচ ঝাল কিনা, তা জানতে চাইতে পারেন অথবা বিভিন্ন ভাষার মধ্যে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করতে পারেন।
২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ জোড়া রে-বান স্মার্ট চশমা বিক্রি হয়েছে।
তবে স্মার্ট চশমার ধারণা নতুন নয়। এর আগে গুগল, স্ন্যাপ, মেটা এবং অ্যামাজনের মতো কোম্পানিগুলো ক্যামেরা, স্পিকার ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট যুক্ত চশমা তৈরি করেছে। কিন্তু আগের স্মার্ট চশমাগুলো স্মার্টফোনের বিকল্প হিসেবে সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি।
কারণ সেগুলোর ব্যাটারি লাইফ কম ছিল, স্ক্রিন ছোট ছিল এবং দামও বেশি ছিল। এখন এআই প্রযুক্তির কল্যাণে স্মার্ট চশমা আরও উন্নত হচ্ছে। স্ন্যাপ জানিয়েছে তারা ২০২৬ সালে এআই-যুক্ত চশমা বাজারে আনবে, যা ব্যবহারকারীর চারপাশের জগৎ সম্পর্কে জানতে পারবে।
অ্যাপেলও (Apple) আগামী বছর স্মার্ট চশমা বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে।
বাজার গবেষণা সংস্থা এ.বি.আই রিসার্চের (ABI Research) মতে, স্মার্ট চশমার বাজার ২০২৪ সালে প্রায় ৩৩ লাখ ইউনিট থেকে বেড়ে ২০২৬ সাল নাগাদ ১৩ থেকে ১৪ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে। স্মার্ট চশমার ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেখে মনে হচ্ছে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই বাজারে তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়াবে।
স্মার্টওয়াচের (smartwatch) বাজারে কিছুটা মন্দা দেখা গেলেও, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন স্মার্ট চশমা স্মার্টফোনের জায়গা নিতে পারে।
তবে স্মার্ট চশমার সফলতার পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডিভাইসটির প্রয়োজনীয়তা তৈরি করা এবং গোপনীয়তা রক্ষার মতো বিষয়গুলো এখনো গুরুত্বপূর্ণ। ক্যামেরাযুক্ত চশমা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে গোপনীয়তা ভঙ্গের একটা আশঙ্কা থাকে।
স্মার্ট চশমার উচ্চ মূল্যও অনেকের জন্য একটি বাধা হতে পারে। বর্তমানে, মেটার (Meta) রে-বান (Ray-Ban) স্মার্ট চশমার দাম প্রায় ৩০০ মার্কিন ডলার, যা একটি স্মার্টওয়াচের দামের কাছাকাছি।
সবকিছু বিবেচনা করে, স্মার্ট চশমার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (Artificial Intelligence – AI) অগ্রগতি এই প্রযুক্তিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।
স্মার্ট চশমা যদি সত্যিই স্মার্টফোনের জায়গা নিতে পারে, তবে তা প্রযুক্তির জগতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)