সোশ্যাল মিডিয়ার ‘মন্দা’ আতঙ্ক: হাসি না কান্না?

বর্তমান সময়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই অর্থনীতির সম্ভাব্য মন্দা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনাগুলোতে একদিকে যেমন উদ্বেগের ছাপ, তেমনি দেখা যায় হাসি-ঠাট্টার উপাদান।

বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বিষয়কে ‘মন্দার সূচক’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ বলছেন, জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী লেডি গাগা-র আবার আলোচনায় আসা অথবা কনভার্স (Converse) স্নিকারের মতো পরিচিত ফ্যাশন আইটেমের ফিরে আসা—এগুলো নাকি মন্দার লক্ষণ!

আসলে, সরাসরি কোনো অর্থনৈতিক মন্দা এখনো আসেনি। তবে এই ধরনের আলোচনাগুলো একটি গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। বাণিজ্য যুদ্ধ, বাজারের অস্থিরতা এবং মন্দা আসার আশঙ্কা—এসব কারণে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা যেন কিছুটা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

মনের এই অবস্থা হালকা করতে তারা বেছে নিচ্ছেন হাসির আশ্রয়।

অর্থনৈতিক সংকটকালে মানুষ কেন হাসির দিকে ঝোঁকে, সে বিষয়ে মনোবিদরা বিভিন্ন মত দিয়েছেন। তাদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে মানুষ হাসির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করে।

কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এটি একটি কৌশল। উদ্বেগের কারণগুলো যখন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন মানুষ হাসির মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে।

অতীতেও অর্থনৈতিক সংকটের সময় এমনটা দেখা গেছে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়, সংবাদ পরিবেশনায় এবং বিভিন্ন টক শো-তে অর্থনীতির দুরবস্থা নিয়ে অনেক ঠাট্টা-তামাশা করা হয়েছে।

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, সামাজিক মাধ্যমগুলো এই ধরনের আলোচনাকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিয়েছে। টিকটক (TikTok)-এর মতো প্ল্যাটফর্মে এই সম্পর্কিত বিভিন্ন ভিডিও তৈরি হচ্ছে, যা দ্রুত সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

কোনো বিষয়ে নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ করলে, তা অন্যদের মধ্যেও সেই একই ধরনের অনুভূতি তৈরি করতে পারে। ফলে, অনেক সময় এই ধরনের আলোচনাগুলো এক ধরনের ‘সেলফ-ফুলফিলিং প্রফেসি’ বা আত্ম-সিদ্ধ ধারণার জন্ম দেয়, যা শেষ পর্যন্ত বাজারকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনৈতিক মন্দার ধারণা মানুষের মনে গেঁথে গেলে, মানুষজন খরচ করা কমিয়ে দেয়। ফলে বাজারের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় অনেক পুরুষ আন্ডারওয়্যার (underwear) কেনা কমিয়ে দেন, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।

তবে, এই ধরনের আলোচনার পাশাপাশি, অনেকে মন্দা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। বিশেষ করে, ২০০৮ সালের মন্দা থেকে শিক্ষা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের অনেকে অনলাইনে এবং বাস্তব জীবনে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

কেউ কেউ বাগান করা, সাশ্রয়ী রান্নার রেসিপি তৈরি করা, ইত্যাদি বিষয়ে ভিডিও বানাচ্ছেন।

সামাজিক মাধ্যমে এই ধরনের আলোচনাগুলো একদিকে যেমন উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ, তেমনি এটি প্রমাণ করে যে মানুষ কঠিন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়তে রাজি নয়।

তারা হাসির মাধ্যমে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং একই সাথে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *