সামাজিক মাধ্যমের যুগে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি গবেষণা সেই উদ্বেগকে আরও একবার সামনে এনেছে, যেখানে দেশটির প্রায় অর্ধেক কিশোর-কিশোরী মনে করে সামাজিক মাধ্যম তাদের বয়সী তরুণদের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশেও স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে, তাই এই গবেষণা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর করা একটি জরিপে উঠে এসেছে, ৪৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মনে করে, সামাজিক মাধ্যম তাদের বয়সী তরুণদের ওপর ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই’ খারাপ প্রভাব ফেলে।
যেখানে ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩২ শতাংশ। মাত্র ১১ শতাংশ মনে করে, সামাজিক মাধ্যম তাদের বন্ধুদের জন্য ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে’ ইতিবাচক। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ স্বীকার করে যে তারা সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটায়, যা উদ্বেগের একটি কারণ।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিশোরীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব বেশি। তারা ঘুমের অভাব, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কথা বেশি উল্লেখ করেছে।
সামাজিক মাধ্যমের কারণে তাদের মধ্যে বুলিংয়ের শিকার হওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।
এই গবেষণা প্রকাশ হওয়ার পরে, সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষ করে, তরুণদের সুরক্ষায় আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিছু দেশে, যেমন অস্ট্রেলিয়ায়, ১৬ বছরের কম বয়সীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়।
টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তবে, অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যাগুলো বাড়ছে।
পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, ঘুমের ব্যাঘাত, এবং সামাজিক সম্পর্কগুলোতেও এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও, অনলাইনে ভুল তথ্য বা মিথ্যা খবরের (মিথ্যা সংবাদ) বিস্তারও একটি উদ্বেগের বিষয়।
সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পরিবার, শিক্ষক এবং নীতিনির্ধারকদের সচেতন হতে হবে এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।
পাশাপাশি, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সেলিং এবং সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন