সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ও যুদ্ধবন্দীর মধ্যে মিল! কিভাবে?

সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে বন্দীত্ব: কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি আমাদের প্রভাবিত করে।

আজকের ডিজিটাল যুগে, সামাজিক মাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে জুড়ে থাকতে সাহায্য করে, খবর সরবরাহ করে এবং বিনোদন দেয়।

কিন্তু সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা একটি গুরুতর উদ্বেগের কথা বলছেন – সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং লেখক রেবেকা লেমোভ এর মতে, সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার অনেকটা যুদ্ধবন্দীদের মতো অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে ব্যবহারকারীরা অজান্তেই কিছু মানসিক প্রভাবের শিকার হন।

লেমোভ তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, কীভাবে সামাজিক মাধ্যম আমাদের মনকে প্রভাবিত করে এবং আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে, যা তাদের বাস্তব জগৎ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

এর ফলস্বরূপ, ব্যবহারকারীরা তাদের সামাজিক সম্পর্কগুলো দুর্বল করে তোলে এবং একাকিত্বের শিকার হয়। এই অবস্থাটি অনেকটা যুদ্ধবন্দীদের মতো, যাদের বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় এবং তাদের মানসিক অবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আবেগকেও কাজে লাগানো হয়। ২০১৬ সালে ফেসবুক একটি পরীক্ষা চালিয়েছিল, যেখানে তারা ব্যবহারকারীদের কিছু পোস্ট দেখিয়ে তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল।

যারা বেশি ইতিবাচক পোস্ট দেখেছেন, তারা পরবর্তীতে আরো সুখী অনুভব করেছেন এবং যারা বেশি নেতিবাচক পোস্ট দেখেছেন, তাদের মধ্যে হতাশার প্রবণতা দেখা গেছে। লেমোভের মতে, এটি অনেকটা ভলিউম কন্ট্রোলের মতো, যা আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

তাহলে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী? লেমোভ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:

  • নিজের প্রতি সচেতন হন: সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সময় আপনার অনুভূতিগুলো খেয়াল করুন। কোনো নির্দিষ্ট ধরনের কন্টেন্ট আপনাকে উদ্বিগ্ন বা হতাশ করে তুললে, তা সীমিত করুন।
  • বাস্তব জীবনের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন: বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করুন, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিন এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। অফলাইন সামাজিকতা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • ঘুমের প্রতি মনোযোগ দিন: পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন এবং ঘুমের ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • নেতিবাচকতা পরিহার করুন: অনলাইনে নেতিবাচক খবর বা মন্তব্য এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশেও সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তাই, আমাদের সবার জন্য সামাজিক মাধ্যমের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে একাকিত্ব, উদ্বেগ এবং হতাশার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যম আমাদের জীবনের একটি অংশ, তবে এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আমাদের উচিত নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া এবং ডিজিটাল জগতের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি খারাপ দিকগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *