পৃথিবীর বুকে বিরল গাছগুলো: জলবায়ু ও ছাগলের আক্রমণে কি ধ্বংস হবে?

সৌদি আরবের কাছে, ভারত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত একটি দ্বীপ, সোকোত্রা। এখানকার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি আর বিচিত্র গাছপালা একে এনে দিয়েছে এক বিশেষ পরিচিতি। এই দ্বীপেই রয়েছে ড্রাগন ব্লাড ট্রি, যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না।

এই গাছগুলো আজ চরম সংকটের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন আর মানুষের কিছু ভুলের কারণে এই গাছগুলো বিলুপ্তির পথে।

সোসোত্রা দ্বীপটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। এখানকার প্রায় ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই এই দ্বীপের নিজস্ব সম্পদ। বোতল গাছ, ধূপ গাছ—আরও কত বিচিত্র রূপ তাদের! তবে সবার নজর কাড়ে ড্রাগন ব্লাড ট্রি।

মাশরুমের মতো দেখতে এই গাছগুলোর কাণ্ড থেকে বের হয় লাল রঙের আঠা, যা দেখতে অনেকটা রক্তের মতো।

কিন্তু প্রকৃতির এই বিস্ময় আজ হুমকির মুখে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে, যা গাছগুলোর জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনছে।

এছাড়াও, এই দ্বীপে আনা হয়েছে বাইরের কিছু ছাগল প্রজাতি, যা গাছের চারা খেয়ে ফেলছে। ফলে নতুন গাছ জন্মানোর সুযোগ কমে যাচ্ছে।

সোসোত্রার মানুষের জীবনযাত্রাও এই গাছগুলোর ওপর নির্ভরশীল। পর্যটকদের আকর্ষণ করে এই ড্রাগন ব্লাড ট্রি, যা থেকে স্থানীয় মানুষরা রোজগার করে।

পর্যটকদের গাইড এবং স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় তৈরি হওয়া আবাসনের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। গাছগুলো হারিয়ে গেলে, তাদের রুটি-রুজির পথও বন্ধ হয়ে যাবে।

তবে এই পরিস্থিতিতেও কিছু মানুষ আছেন, যারা গাছগুলোকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সেন্না কেইবানির পরিবার তাদের মধ্যে অন্যতম। তারা নার্সারি তৈরি করে গাছের চারা তৈরি করছেন এবং ছাগলের আক্রমণ থেকে তাদের বাঁচাচ্ছেন।

কিন্তু শুধু স্থানীয় মানুষের চেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান হবে না। ইয়েমেনের রাজনৈতিক অস্থিরতাও একটি বড় বাধা। যুদ্ধের কারণে সরকারের পক্ষে পরিবেশ রক্ষার দিকে নজর দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় পরিবেশবিদ সামি মোবারক মনে করেন, স্থানীয় সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাহায্য ছাড়া এই গাছগুলোকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তাদের আরও বেশি অর্থ এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারা বিশ্বেই বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা—এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে, যা আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি।

সোসোত্রার ড্রাগন ব্লাড ট্রি-এর এই সংকট আমাদের একটি বড় বার্তা দেয়। প্রকৃতির প্রতি আরও যত্নবান হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা আজ সবচেয়ে বেশি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *