সকাল শুরু করার জন্য ৬ ঘণ্টার রুটিন? অনেকের কাছেই হয়তো বিষয়টি বেশ কঠিন মনে হতে পারে। তবে দিনের শুরুটা ভালো করতে এত সময় না দিয়েও কিছু সহজ অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির দীর্ঘ ৬ ঘণ্টার সকালের রুটিনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তিনি দাঁত ব্রাশ করা থেকে শুরু করে সাঁতার কাটা, ধ্যান করা, ব্যায়াম করা এবং আরও অনেক কিছু করেন। এমন দীর্ঘ রুটিন দেখে অনেকে যেমন বিস্মিত হয়েছেন, তেমনই অনেকে উৎসাহও প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত দীর্ঘ রুটিনের প্রয়োজন নেই। বরং সকালে শান্ত ও পরিকল্পিত কিছু কাজ করলে তা আমাদের মন ও শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। একজন সাইকোথেরাপিস্ট কামালিন কৌর বলেন, সকালে কয়েকটি সাধারণ অভ্যাস গড়ে তুললে দিনের শুরুটা ভালো হয়।
এর ফলে আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং মেজাজও ভালো থাকে। সকালের এই রুটিন আমাদের সারা দিনের জন্য একটি ভালো ভিত্তি তৈরি করে।
কর্মক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক শন ম্যাকলিন এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখেছেন, সকালে একই কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ে করলে তা কর্মীদের জন্য উপকারী।
কারণ, মানুষ যখন একটি নির্দিষ্ট ছন্দে কাজ করে, তখন তাদের মানসিক শক্তি বেশি থাকে। সকালে কাজগুলো একটি নির্দিষ্ট নিয়মে করার ফলে মস্তিষ্কের উপর চাপ কম পরে এবং সারাদিন ধরে কর্মীরা শান্ত ও অবিচলিত থাকতে পারে। ম্যাকলিন আরও জানান, সকালে রুটিনে ব্যাঘাত ঘটলে তা কর্মীর পুরো দিনের উপর প্রভাব ফেলে।
তাহলে একটি ভালো সকালের রুটিন কেমন হওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সবার জন্য একই ধরনের রুটিন উপযুক্ত নাও হতে পারে। প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা। তবে কিছু সাধারণ অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে।
তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে ওঠা বা সকালে নাস্তা করার সময় পাওয়া না গেলে তা আমাদের মানসিক শান্তির জন্য ক্ষতিকর। তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কয়েকটি বিষয় যোগ করা যেতে পারে, যা আমাদের মনকে শান্ত করতে সাহায্য করবে।
১. বিছানা গোছানো: সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজের বিছানা গুছিয়ে নিন। গবেষণায় দেখা গেছে, অগোছালো পরিবেশ উদ্বেগ বাড়ায়। তাই সকালে বিছানা গোছানোর মতো ছোট একটি কাজ করার মাধ্যমে মন ভালো রাখার হরমোন, ডোপামিন নিঃসরণ হয়।
২. জল পান করা: ঘুম থেকে ওঠার পর এক গ্লাস জল পান করুন। রাতে দীর্ঘ সময় ধরে জল পান না করার কারণে শরীর সামান্য জলশূন্য হয়ে যায়। জল পান করলে শরীর সতেজ হয়।
৩. ক্যাফিন গ্রহণের সঠিক সময়: সকালে ঘুম থেকে উঠেই কফি বা চা পান করার পরিবর্তে, কিছু খেয়ে তারপর ক্যাফিন গ্রহণ করা ভালো।
৪. সূর্যের আলো: ঘুম থেকে ওঠার প্রথম ঘণ্টায় কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে থাকুন। সম্ভব হলে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। সূর্যের আলো আমাদের শরীরের সার্কেডিয়ান রিদমকে সক্রিয় করে তোলে, যা সকালে আমাদের সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
এই অভ্যাসগুলো আমাদের ভালো থাকতে এবং দিনের শুরুটা ভালোভাবে করতে সাহায্য করতে পারে। তাই নিজের জন্য একটি উপযুক্ত রুটিন তৈরি করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস