পুরুষদের উপর আধুনিক সমাজের চাপ: একটি অসম প্রতিযোগিতার চিত্র
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, যেখানে সবকিছুই দ্রুত ছড়াচ্ছে, সেখানে পুরুষদের জীবনযাত্রাও যেন এক নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি, একজন অনলাইন ফিটনেস কোচের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে আলোচনা চলছে, যেখানে তিনি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে এক অদ্ভুত রুটিন পালন করছেন।
এই রুটিনে ছিল মুখের টেপ খোলা থেকে শুরু করে বরফ পানিতে মুখ ডোবানো, এমনকি কলা গাছের খোসা দিয়ে ত্বক ম্যাসাজ করার মতো বিষয়গুলো। ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হওয়ার পরে, অনেকেই এটিকে ব্যঙ্গ করেছেন এবং এর বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে, এই ভিডিওটি নিছক একটি কৌতুক নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। বর্তমান সময়ে, পুরুষদের উপর নিজেদের শারীরিক গঠন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করার এক তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
সমাজের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি, যেমন – ফিটনেস গুরু বা জীবনধারা পরামর্শদাতা, এই ধরনের জীবনযাত্রাকে উৎসাহিত করছেন। তারা তাদের তৈরি করা পণ্য এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন এবং একটি বিশেষ ধরনের জীবনধারা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করছেন।
এই ধরনের জীবনযাত্রায়, ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা, কঠোর ব্যায়াম করা এবং বিশেষ খাদ্য গ্রহণ করা অপরিহার্য।
কিন্তু এই ধরনের জীবনযাত্রা কি সবার জন্য বাস্তবসম্মত? সমাজের চোখে সফল হওয়ার এই সংজ্ঞা কি সবার জন্য প্রযোজ্য? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের জীবনযাত্রার ধারণা একটি বিভ্রম তৈরি করে।
কারণ, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন এত সহজ বা গোছানো নয়। তাদের কাজের চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব এবং অন্যান্য উদ্বেগের কারণে এই ধরনের রুটিন অনুসরণ করা প্রায় অসম্ভব।
এই ধরনের জীবনযাত্রার ধারণার আরেকটি বিপদ হলো, এটি পুরুষদের মধ্যে একটি আদর্শ তৈরি করে এবং যারা সেই আদর্শের সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারেন না, তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করে।
আমাদের সমাজে, পুরুষদের কাছ থেকে প্রায়ই প্রত্যাশা করা হয় তারা পেশাগত জীবনে সফল হবে, শক্তিশালী হবে এবং ভালো উপার্জন করবে। এই চাপ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পুরুষদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ, তবে তার সংজ্ঞা সবার জন্য এক হতে পারে না। শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তবে সমাজের চাপিয়ে দেওয়া আদর্শের পেছনে ছুটে যাওয়া উচিত নয়।
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব সক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সমাজের উচিত, প্রত্যেককে তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে জীবন যাপন করতে উৎসাহিত করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন