বিশ্বজুড়ে সৌর ও বায়ু শক্তির ব্যবহার বাড়ছে, যা বিদ্যুতের চাহিদাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই বছর প্রথমবারের মতো, জীবাশ্ম জ্বালানির (fossil fuels) থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি (renewable energy) ব্যবহার করে।
এটি জলবায়ু পরিবর্তনের (climate change) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এনার্জি থিংক ট্যাংক এমবার (Ember)-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্বজুড়ে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন ৩১ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে, বায়ু শক্তি উৎপাদন ৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই সময়ে নবায়নযোগ্য শক্তিগুলি (সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ, বায়োএনার্জি, এবং ভূ-তাপীয় শক্তি) সম্মিলিতভাবে কয়লার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এই তথ্যগুলি আমাদের গ্রহের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক নির্দেশ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে কার্বন নিঃসরণ (carbon emissions) কমানো সম্ভব হবে।
এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলিও হ্রাস করা যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ।
প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিদ্যুতের বাজারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের কথা ধরলে দেখা যায়, তারা সৌর ও বায়ু শক্তি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ২ শতাংশ কমেছে।
ভারতের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়, যেখানে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই দুটি দেশ তাদের কার্বন নিঃসরণও কমাতে সক্ষম হয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (US) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (EU) নবায়নযোগ্য শক্তির অগ্রগতি কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ধীর গতির কারণে কয়লা ও গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে, যার ফলে কার্বন নিঃসরণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রসঙ্গে, গবেষণাটির প্রধান লেখক মালগোরজাটা উইয়ারোস-মটিকা (Małgorzata Wiatros-Motyka) বলেন, ” জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সামান্য কমলেও, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
আমরা দেখছি, কার্বন নিঃসরণ এখন স্থিতিশীল হওয়ার পথে।”
এই গবেষণা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, আমাদের দেশেও বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। সরকার নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে।
সৌর বিদ্যুৎ (solar power) এবং বায়ু বিদ্যুতের (wind power) সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমরাও নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে আরও দ্রুত উন্নতি করতে পারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকলে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা করা যাবে, তেমনি বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোও সহজ হবে।
এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)